বৃহস্পতিবার, ৭ জুন, ২০১৮

সাকিল সিরিজ ২


সাকিলের হাঁতুড়ি বাটাল, পর্ব ২

বিষয়: এ কেমন বাস্তবতা ? 

(ক)

শামীম ও সাকিল উভয়ই ঢাকা কলেজের বিজ্ঞান বিভাগের ছাত্র ৷ তৃতীয় বর্ষে পদার্পন করেছে মাত্র ৷ সাকিলের সাথে শামীমের প্রায় সময় বিভিন্ন ব্যাপার নিয়ে কথা হয় ৷ শামীম নাস্তিক নয়, তবে এগনষ্টিক ! প্রতিবারই সে ইসলামের কোন না কোন ব্যাপারে অভিযোগ তুলে ৷

নিচের দিকে তাঁকিয়ে ফুটপাত ধরে হেঁটে চলছিল সাকিল ৷ হঠাৎ করেই ধাঁক্কা খেল শামীমের সাথে ৷ 
—আরে সাকিল কি ব্যাপার ! কোথায় যাচ্ছিলি ৷ তাও আবার নিচের দিকে তাঁকিয়ে !
—এইতো এক চাঁচার বাড়ি থেকে আসলাম ৷
— কিন্তু এই চোখ নামিয়ে চলার ব্যাপারটা তো বুঝে আসলো না ৷
— কারণ ইসলাম আমাদেরকে এমনটিই শিক্ষা দেয় ৷ (১)
— আচ্ছা ! বলত এটা ধর্মের কেমন বাস্তবতা, যা বলে মানুষকে কিনা কেবল ইবাদতের জন্যই বানানো হয়েছে, অন্য কোন উদ্দেশ্যে নয় ৷ তাহলে মানুষের কি আর কোন উন্নয়ন দরকার নেই ? এটা কি বাস্তবতা হলো !
—আচ্ছা তোর প্রশ্নটি নিয়ে কথা বলছি ৷ আগে চল ঐ চায়ের দোকানে গিয়ে বসি ৷

অতঃপর সাকিল ও শামীম দুজনেই চায়ের দোকানের দিকে অগ্রসর হলো ৷ 

(খ)

সাকিল ও শামীম উভয়ই চায়ের কাঁপে চুমুক দিচ্ছে ৷ চা শেষ করে সাকিল পুনরায় বলা শুরু করল

— তুই কি জানিস, প্রত্যেক মানুষই কারও না কারও অবশ্যই দাস !
শামীম বলল, নাহ ! এমনটি হতেই পারে না ! আমার ব্যাপারে আমি তোকে বলতে পারি ৷ আমি কারও দাস নই ! আমার বিবেক দিয়ে যেভাবে চলা সঠিক মনে হয় সেভাবেই চলি ৷
— হা হা হা ! শামীম ! তোর দাবী তো শুনলাম ! কিন্তু আমি তোর দাস না হওয়ার দাবীকে ভূল প্রমাণ করতে পারি !
— কিভাবে ?
— বলছি ! ইবাদত (العبادة) বা দাসত্ব বলা হয় কোন কিছুর প্রতি পরিপূর্ণ ভালবাসা বা ভয় সহকারে ঝুঁকে পড়াকে, কারও প্রতি মাথা নুইয়ে রাখাকে, অনুগত হয়ে থাকাকে, কারও হুকুম বা নির্দেশ মেনে চলাকে ৷ এই দাসত্ব কোন ব্যাক্তির প্রতিও হতে পারে , আবার ঐ ব্যাক্তির দৃষ্টিভঙ্গীর প্রতিও হতে পারে, আবার কখনও বা হতে পারে নিজ দৃষ্টিভঙ্গীর প্রতিও ৷ যেমন কেউ বিবেকের কথা বললো ৷ তাহলে দাসত্বের সংজ্ঞা অনুযায়ী সে তার বিবেকের দাস ৷ কারণ তার দাবী অনুযায়ী কেবল বিবেকের কথাগুলো দ্বারা ভালো মন্দ বিচার করা উচিত ৷ (২)

—তাহলে তুই আমাকে বিবেকের দাস বলতে চাচ্ছিস তাইতো !
আচ্ছা ! ঠিকাছে ! তোর কথা না হয় বুঝলাম, কিন্তু তুই আমাকে বল ,বিবেক নিয়ে চলাটা কেন যৌক্তিক নয়, আর স্রষ্টার অনুগত হয়ে চলাটা কতটুকু যৌক্তিক ও বাস্তবতাপূর্ণ !
—দেখ ! শামীম ! তুই আবারও ভূল করছিস ! বিবেক যৌক্তিক নয় আমি এমনটি বলিনি ৷ আমি বিবেকের দাসত্ব বা অনুগত হয়ে থাকা বলতে বুঝিয়েছি বিবেক ভাল বা মন্দ যে দিকেই পথ দেখাক না কেন তাঁর অনুগত হয়ে থাকা ৷
অথচ ব্যাপারটা খুবই স্পষ্ট যে, সব মানুষের বিবেক একরকম নয় ৷ একজন বিজ্ঞানীর বিবেক যা বলবে একজন সাধারণ মানুষের বিবেক সে কথা বলবে না ৷ একজন দয়াবান ব্যাক্তির বিবেক যা বলবে তা একজন পাষাণের বিবেক তা বলবে না ৷ সন্তানের জন্য একজন মায়ের বিবেক যা বলবে তা অন্য কারও বিবেক বলবে না ৷
সুতরাং সকল বিবেকের ভাল-মন্দের মাইথোলজি একরকম নয় ৷
আমি যা বলতে চাচ্ছি সেটা হলো ঘোড়ার রশি নঁড়বড়ে , ভঙ্গুর, হেঁলে পড়া জাতীয় নমনীয় কোন খুঁটির সাথে না বেঁধে এমন কোন শক্ত, মজবুত, দৃঢ়তাপূর্ণ এমন এক খুঁটির সাথে বাঁধতে যা কখনও ভেঙে যাবার নয় ৷
— মানে !? কিসের ঘোঁড়া আর কিসের খুঁটি, বুঝিয়ে বল ৷
— আরে গর্দভ ! কেন বুঝিস না ! মানুষের বিবেক যে পরিবেশে বা যে দৃষ্টিভঙ্গীতে বা যে জ্ঞানের আলোকে বড় হবে সেভাবেই তা বেঁড়ে উঠবে ৷ ঠিক একইভাবে যখন কেউ বিবেককে এমন কোন সত্ত্বার হস্তগত করে দিবে যিনি হবেন পরিপূর্ণভাবে নির্ভূল, যিনি মহাজ্ঞানী ও মহাপ্রজ্ঞাময় ও পরিপূর্ণ ইনসাফকারী এবং যিনি বিন্দুমাত্র জুলুমকারী নয় তখনই কেবল তাঁর বিবেক সঠিক পথে এগুতে পারে ৷ আর এই সত্তা কেবল তিনিই হতে পারেন যিনি আমাদেরকে সৃষ্টি করেছেন ৷ তিনি হলেন সমগ্র সৃষ্টিজগতের একমাত্র রব মহান আল্লাহ তাআলা ৷ তাই তিনি পবিত্র কোরআনে বলেছেন —
وما خلقت الجن والانس الا ليعبدون ٥
"মানুষ ও জ্বীনকে আমি কেবল আমার ইবাদত বা পরিপূর্ণ ভালবাসা ও ভয় সহকারে কেবল আমার দাসত্বের জন্যই জন্যই সৃষ্টি করেছি, অন্য কোন উদ্দেশ্যে নয় ৷"(সূরা যারিয়াত ৫১:৫৬)

আরো সহজভাবে বললে একটি রোবটের পরিচালনা কার্যক্রম যেমন তাঁর মেকার ভাল বুঝতে পারেন ঠিক তেমনি একজন মানুষের ক্ষেত্রেও তাঁর পরিপূর্ণ ভাল ,মন্দ ও সঠিক পরিচালনা কার্যক্রম কেবল তাঁর মেকার তথা সৃষ্টিকর্তাই সবচাইতে ভাল বুঝবেন এটাই স্বাভাবিক ৷ অন্যভাবে তা সম্ভব নয় ৷
তাইতো মহান আল্লাহ বলছেন—
صبغة الله-ومن احسن من الله صبغة - ونحن له عبدون ٥
"এটাই হলো আল্লাহর রঙ ৷ আর আল্লাহর চাইতে উত্তম রঙ আর কার হতে পারে ৷ আর আমরা কেবল তাঁরই ইবাদত করি ৷"(সূরা বাক্বারাহ ২:১৩৮)

—আচ্ছা ! তোর এই কথাও না হয় বুঝলাম ! কিন্তু আমি যদি বলি তোরা আল্লাহর প্রতি এত বিশ্বাস করা সত্ত্বেও কেন এত নির্যাতিত হচ্ছিস ! তাহলে তুই কি বলবি ? 
— আচ্ছা ! তোকে যদি বলি পানিতে চিনি মিশালে কি হয় ?
—তুই কি সব প্রশ্ন করিস বলতো ৷ এখানে চিনি, পানির কথা কেন আসছে ৷ contacts এ আয় ৷
— My dear friend ! I am in contacts ! Pls give me ans !
— আচ্ছা ! ঠিকাছে ! , মিষ্টি !
— যদি লবণ মিশানো হয় তখন !
—লবণাক্ত !
—তাহলে উপর্যুক্ত পর্যবেক্ষণের আলোকে আমরা বুঝতে পারছি ৷ পানিতে কিছু মিশালে পানি তাঁর আসল গুনাগুনের মধ্যে থাকে না তাইতো !
— হ্যাঁ ! কিন্তু তাতে কি ! 
— সমস্যা এখানেই ৷ মানুষ আল্লাহর প্রতি বিশ্বাস করছে ঠিকই কিন্তু তাঁর স্বাদ ও মৌলিক গুনাগুনকে পরিবর্তন করে ৷ অথচ বিশ্বাস নামক পানির স্বাদ, গন্ধ, গুনাগুনকে অক্ষুণ্ণ ও বিশুদ্ধ রাখাই ছিল পরিপূর্ণ শর্ত ৷ আর এই চিনি,লবণের মতই বিশ্বাসের রঙ ,গন্ধ ও বিশুদ্ধতাকে পরিবর্তনকারী বিষয়টি হলো শিরক ! মহান আল্লাহ বলছেন —
وما يؤمن اكثرهم بالله الا وهم مشركون ٥
"অধিকাংশ মানুষই আল্লাহর প্রতি ইমান আনে অথচ তাদের অবস্হা কেবল মুশরিকদের মত ৷"(সূরা ইউসুফ ১২:১০৬)

পবিত্র কোরআন আরও বলছে— 
ان الشرك لظلم عظيم ٥
"নিশ্চয়ই নিশ্চয়ই শিরক হলো সবচেয়ে বড় জুলুম !" (সূরা লুক্বমান ৩১:১৩) 

আর শিরকের শাখা প্রশাখা সমূহের একটি হলো, নিজ প্রবৃত্তি বা বিবেক বা চিন্তা চেতনা ও দৃষ্টিভঙ্গীর পূজারী বা দাস হওয়া ৷ (৩) 

এই স্তরের যারা তাঁদের চিন্তা চেতনার সুস্হতা লোপ পায়
—মানে তুই বলতে চাচ্ছিস Psychological Problem !
— হ্যাঁ ! তা নয় তো কি !
—সেটা কেমন ! 
— দেখ ! আগেই বলেছি মানুষের বিবেক বা চিন্তাকে সঠিক পথে পরিচালনার জন্য এক মহান , সর্বশক্তিমান, সর্বজ্ঞ ও এক নির্ভূল সত্ত্বা আল্লাহ রাব্বুল আলামীনের কাছে পরিপূর্ণভাবে সমর্পণ করতে হবে, অন্যথায় তা সম্ভব নয় ৷ আর এইসব লোকেরা এই মহাসত্যটি উপলব্ধি করতে ব্যর্থ ! তারা বুঝতে পারে না একটি রোবটের মেকার যেমন তাঁর ভাল, মন্দ ও পরিচালনা সম্পর্কে সবচেয়ে বেশী অবহিত ঠিক তেমনি একজন মানুষের ক্ষেত্রেও কেবল এবং কেবল তার স্রষ্টাই তার ভাল, মন্দ ও সঠিক পরিচালনা সম্পর্কে অবহিত ৷ তাই তাঁরা হলো মানসিক রোগী ৷ সুতরাং এইসব অসুস্হদের অনুসরণের মানে হলো অনেকটা পাগলের অনুসরণ করার মত ৷
আর আল্লাহর প্রতি বিশ্বাস করার মানেই হলো এই অসুস্হ মানসিকতার সকলকে অস্বীকার করতে হবে ৷ দুই নৌকায় পা রাখা যাবে না ৷
যেমন মহান আল্লাহ বলেন,
فمن يكفر بالطاغوت وي‍ؤمن بالله فقد استمسك بالعروة الوثقي لا انفصام لها—
"আর যে তাগুতকে অস্বীকার করেছে, এবং আল্লাহর প্রতি বিশ্বাস স্হাপন করেছে নিশ্চতভাবে সে ধারণ করেছে এমন এক হাতল যা কখনও ভঙবার নয় ৷"(সূরা বাক্বারাহ ২:২৫৬)
আর এইসব অনুসৃত অসুস্হ ব্যাক্তিরাও এই তাগুত গ্রুপের অন্তর্ভূক্ত ৷ (৪)
এই তাগুতের কেউ কেউ আল্লাহকে অস্বীকার করে বসে ৷ তাদেরকে মহান আল্লাহ বলেন,
اولم ير الذين كفروا ان السموت والارض كانتا رتقا ففتقنهما - وجعلنا من الماء كل شيء حي - افلا يؤمنون ٥
"অবিশ্বাসীরা কি দেখে না, আসমান ও যমীন মিশে ছিল ওতপ্রতোভাবে, অতঃপর আমি উভয়কে পৃথর করে দিলাম এবং প্রাণবন্ত সমস্ত কিছু সৃষ্টি করলাম পানি থেকে ৷ তবুও কি তাঁরা ইমান আনবে না ৷"(সূরা আম্বিয়া ২১:৩০)
কখনও বা পরকালকে স্বীকার করলেও পরকাল নিয়ে চিন্তা করে চলাকে জীবনের জন্য হুমকী মনে করে বা ইসলামকে সেঁকেলে ভাবে ,কখনও বা পরকাল ও ইসলামকে অস্বীকার করে চলে, কখনও বা ধন সম্পদ ও নারীর লোভে এমনভাবে চলে যেন দুনিয়াটাই সবকিছু ৷ আর বড়াই করে বিত্ত বৈভব ও তথাকথিত আধুনিকতার ৷ (৫)

আর এমন লোকদের অস্বীকার না করার পরিণাম হলো দুনিয়ার মোহ চেপে বসা এবং মৃত্যুকে অপছন্দ করতে শুরু করে দেওয়া ৷
আর ঠিক এই কারণেই মুসলিমরা নির্যাতিত হচ্ছে ! 
যেমন সাওবান (رضي الله عنه) এর সূত্রে এসেছে, আমাদের নবী (صلي الله عليه وسلم) বলেছেন,
يوشك الامم ان تداعي عليكم كما تداعي الاكلة الي قصعتها فقال قائل ومن قلة نحن يومئذ قال بل انتم يومئذ كثير ولكنكم غثاء كغثاء السيل ولينزعن الله من صدور عدوكم المهابة.منكم وليقذفن الله في قلوبكم الوهن فقال قائل يا رسول الله وما الوهن قال حب الدنيا وكراهية الموت—
"অচিরেই বিজাতীরা তোমাদের বিরুদ্ধে একত্রিত হবে ঠিক যেমন খাবার গ্রহণকারীরা খাবারের পাত্রের সামনে একত্রিত হয় ৷
তখন এক ব্যাক্তি বলল, সেদিন কি আমরা সংখ্যায় কম হব ৷
তিনি বললেন, বরং সেদিন তোমরা সংখ্যায় অনেক বেশী হবে ৷ কিন্ত তোমরা হবে প্লাবণের স্রোতে ভেসে যাওয়া আবর্জনার মত ৷ আর তোমাদের শত্রুদের অন্তর থেকে তোমাদের ব্যাপারে আতঙ্ক দূর করে দেবেন এবং তোমাদের অন্তরে 'ওহান' (ভীরুতা) ঢেলে দিবেন ৷
তখন এক ব্যাক্তি বলল, হে আল্লাহর রাসূল ! ওহান কি ? তিনি বললেন, দুনিয়ার মোহ ও মৃত্যুকে অপছন্দ করা ৷" (৬)

আর এর বিপরীতে সর্বোচ্চ বিনয় ও ভালবাসা সহকারে আল্লাহর প্রতি পরিপূর্ণ নির্ভেজাল বিশ্বাসের প্রতিফলনে গড়ে উঠবে এক অপূর্ব উন্নয়নও উৎকর্ষ ভিত্তিক সমাজ ৷
—যেমন ?
— যেমন ধর ৷
১৷ মানুষ তখন কোন প্রতারক, ঘুষখোঁর, নির্যাতনকারী, রাজনৈতিক চালবাঁজ, ভেজাল ব্যাবসায়ী ইত্যাদি কারও কাছে মাথা নোয়াবে না ৷ কারণ তাঁরা জানবে তাঁদের স্রষ্টা তা অপছন্দ করে ৷ আর তিনি কেবল ইনসাফকারীদের ভালবাসেন ৷ জালেমদের নয়
২৷ যে কোন কাজে সমাজ তখন কোয়ানটিটি বা সার্টিফিকেট দেখে কর্মী নিয়োগ দেবে না বা আরও সহজভাবে বললে সিন্ডিকেট নামক থিওরি উঠে যাবে ৷ মানুষ তখন আমানতদার, দায়িত্ববান ও নিষ্ঠাবান মানুষের প্রতিই দায়িত্ব অর্পণ করবে ৷ এমনকি পাত্র পাত্রীর ক্ষেত্রেও কেবল আদর্শকেই বেঁছে নেবে সবকিছুর চাইতে ৷ ধন-সম্পদ, বাড়ি গাড়ি ইত্যদিকে অগ্রগণ্য করবে না ৷ অর্থাৎ বিয়ে সহজ হয়ে যাবে ৷ ফলে প্রেমের নামে ব্যাভিচারের মত নোংরামিও বন্ধ হবে ৷
৩৷ সমাজে বিভাগ, জেলা, দেশ, এড়িয়া, ভাষা বা জাতিগত পার্থক্য থাকলেও তারা এই সমস্ত থিওরিকে কোন প্রকার ভ্রূক্ষেপই করবে না ৷ বরং আদর্শের ভিত্তিতে পরস্পরকে বিবেচনায় নিবে ৷ কারণ তারা জানবে এটা আমাদের স্রষ্টার দেওয়া মাপকাঠী ৷
৫৷ সমাজে থেকে সন্ত্রাস, জঙ্গীবাদ, ধর্ষক ইত্যাদি এবং মাজার পূজা, ভাগ্যগণনা, কবর পাঁকা, পীরতন্ত্র, পাদ্রী ও হিন্দু পন্ডিত ও তান্ত্রিকদের ধর্মব্যবসা ইত্যাদি বিদায় নিবে ৷ এমন কি দেশ পরিচালিত হবে এক ইনসাফপূর্ণ, সার্বভৌমত্বপূর্ণ, শক্তিশালী এবং অত্যন্ত সুষ্ঠু ও জ্ঞানগর্ভ নীতিমালার আলোকে ৷ ক্ষমতার লড়াই তখন থাকবে না, থাকবে আমানতদারীতা ঘাঁড়ে নেওয়ার ভয়, নিজ অক্ষমতার ভয় ৷ ফলে ক্ষমতায় কেবল তারাই থাকবে যারা হবে অত্যন্ত নিষ্ঠাবান ও পরিশ্রমী এবং দায়িত্বশীল ৷ কারণ তারা জানবে কাউকে ফাঁকি দেওয়া গেলেও স্রষ্টাকে ফাঁকি দেওয়া সম্ভব নয় ৷
৬৷ মুসলিম ও অমুসলিম সবাই নিজ নিজ ধর্ম পালনে স্বাধীনতা পাবে ৷
এক কথায় মানুষ এক চরম উৎকর্ষপূর্ণ ব্যাক্তিজীবন, দাম্পত্যজীবন, সমাজজীবন, অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি, শিক্ষাজীবন, ও রাষ্ট্রীয় জীবন উপভোগ করবে ৷ 
(এ ব্যাপারে বিস্তারিত জানুন, আর রাহীকুল মাখতূম, সীরাত ইবনে হিশাম, সীরাতে মুস্তফা ইত্যাদি গ্রণ্থ স্টাডি করার মাধ্যমে, যেখানে এমন একটি সমাজের উদাহরণ আপনি পেতে পারেন)
আর এই উৎকর্ষপূর্ণ ও উন্নয়নশীল বাস্তবতার ব্যাপারে ইঙ্গিত করেই ইমাম তাইমিয়্যাহ বলেছেন,
ونعت صفوة خلقه بالعبودية له
"কোন মানুষের সফলতা বা উন্নয়নের সর্বোচ্চ স্তরে পৌছানোর অর্থই হবে সে তার কাজ কর্মের দ্বারা ইবাদতের সর্বোচ্চ স্তরে পৌছেছে ৷"(৭)

এভাবে সাকীল ও শামীম অনেক্ষণ কথা বলল ৷ হয়ত শামীম বুঝতে পেরেছে আসলেই স্রষ্টার প্রতি বিশ্বাস ও তাঁর ইবাদতগুজার হওয়ার ব্যাপারটি কত বেশী বাস্তব, যৌক্তিক ও সুস্হ চিন্তার ফসল ৷ হয়ত আপনারাও বুঝেছেন ৷ তাই নয় কি ? 

টীকাঃ 
১৷ সূরা নূর ২৪:৩০-৩১; সহীহ বুখারী ২৪৬৫
২৷ দেখুন, ইবাদতের মর্মকথা, ইমাম তাইমিয়্যাহ, আধুনিক প্রকাশনী, পৃষ্ঠা ১৩-৪৯
৩৷সূরা জাসিয়াহ ৪৫:২৩,সূরা ফুরক্বান ২৫:৪৩; সূরা আনকাবূত ২৯:৩৯, সূরা নামল ২৭:১৩-১৪ ৷ সংক্ষিপ্ত তাফসীর, আবূ বকর যাকারিয়া, পৃষ্ঠা ১৯৬১, টীকা -১ ৷ তাফসীর ইবনে কাসীর, ড মুজিবুর রহমান, সংশোধিত সমস্করণ, ১৫ তম খন্ড, পৃষ্ঠা ২৬৫-২৬৬ ৷ ইবাদতের মর্মকথা, ইমাম তাইমিয়্যাহ, আধুনিক প্রকাশনী, পৃষ্ঠা ৮৩-৮৯ ৷ 
৪৷ সূরা বাক্বারা ২:২৫৬, সূরা নিসা ৪:৫১,৬০,৭৬ ৷ সংক্ষিপ্ত তাফসীর, আবূ বকর যাকারিয়া মাদানী, পৃষ্ঠা ৪৫, টীকা ২ এবং ২৩৪ পৃষ্ঠা, টীকা ১৷ কালিমার মর্মকথা, আকরামুজ্জামান বিন আব্দুস সালাম, পৃষ্ঠা ২৮৬-২৯০
৫৷ সূরা ক্বালাম ৬৮:১০-১৬, সূরা কাহাফ ১৮:৩২-৪৪, সূরা বাক্বারা ২:২৮, উপরোক্ত আয়াতের ব্যাখ্যা দেখুন আবূ বকর যাকারিয়ার তাফসীর গ্রণ্থে ৷
৬৷সুনান আবূ দাউদ, হাদীস ৪২৯৭, মান: সহীহ, তাহক্বীক: আলবানী
৭৷ আল-উবূদিয়্যাহ (আরবি)-ইমাম তাইমিয়্যাহ, পৃষ্ঠা ২১; ইবাদতের মর্মকথা, ইমাম তাইমিয়্যাহ, আধুনিক প্রকাশনী, পৃষ্ঠা ১৫ ৷

বিশেষ কৃতজ্ঞতাঃ 
ইবাদতের মর্মকথা -ইমাম তাইমিয়্যাহ, আধুনিক প্রকাশনী ৷
প্যারাডক্সিকাল সাজিদ -আরিফ আজাদ, গার্ডিয়ান পাবলিকেশন
ডাবল স্ট্যান্ডার— ডা শামসুল আরেফীন, মাকতাবাতুল আযহার প্রকাশনী ৷

এ কেমন বাস্তবতা /মেরাজুল ইসলাম প্রিয়

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন