শুক্রবার, ৩ আগস্ট, ২০১৮

ফিরে দেখা, পর্ব ১



ফিরে দেখা, পর্ব ১

বিষয়: নূহ (عليه وسلم) এর মহাপ্লাবণ এবং কিছু শিক্ষা !

সকল প্রশংসা সমস্ত সৃষ্টিজগতের একমাত্র রব মহান আল্লাহ তাআলার জন্য ৷ যিনি মানুষকে কেবল এবং কেবল তাঁর ইবাদতের জন্যই সৃষ্টি করেছেন , তার সৃষ্ট মানব ও জ্বীন কর্তৃক সৃষ্ট শরীক থেকে নিজেকে সম্পূর্ণ উন্মুক্ত ঘোষণা করেছেন ৷ যা লঙ্ঘনের দায়ে তিনি বহু জাতিকে ধ্বংস করেছেন এবং তিনি বান্দার উপর বিন্দুমাত্র জুলুমকারী নন ৷(১) এবং একই কারণে ধ্বংস হয়েছিল নূহ (عليه وسلم) এর জাতি মহাপ্লাবণের মাধ্যমে !
আর অসংখ্য দরূদ ও সালাম পেশ করছি মানবতার সেই মহান মুক্তিদূত মুহাম্মদ (صلي الله عليه وسلم) এর প্রতি , যিনি মহান আল্লাহর পক্ষ থেকে নূহ (عليه وسلم) এর সময়কার মহাপ্লাবণের ঘটনা সমগ্র মানবজাতির সামনে পেশ করেছেন ৷ উক্ত ঘটনার শিক্ষা সবিস্তারে বর্ণনা করেছেন ৷

মহাপ্লাবণের সে সময় যখন ঘনিয়ে আসলো আকাশের দ্বার উন্মুক্ত হয়ে শুরু হলো প্রচন্ড বারি বর্ষণ ৷ ভূমি থেকেও নির্গত হল অজস্র পানির ধারা ৷ মহান প্রভুর নির্দেশে তারা পরস্পর মিলিত হলো এক পরিকল্পিত কাজে ৷ সৃষ্টি হলো এক মহা প্লাবনের ৷ যার ঢেউ ছিল পর্বতসম কিংবা তাঁর চেয়েও উঁচু ৷ যা গ্রাস করল অস্বীকার কারীদের , এমনকি নূহ (عليه وسلم) এর ছেলেকেও ! কারণ সে ছিল অস্বীকারকারীদের অন্তর্ভূক্ত ৷ 
আসুন এবার সেই ঘটনার সাথে কিছুটা পরিচিত হই ৷
মহান আল্লাহ বলেন,

كذبت قبلهم قوم نوح فكذبوا عبدنا وقالوا مجنون وازدجر ٥ فدعا ربه اني مغلوب فانتصر ٥ ففتحنا ابوب السماء بماء منهمر ٥ وفجرنا الارض عيونا فالتقي الماء علي امر قد قدر ٥ وحملنه علي ذات الوٰح ودسر ٥ تجري باعيننا- جزاء لمن كان كفر ٥ ولقد تركنها اية فهل من مدكر ٥ فكيف كان عذابي ونذر ٥
"তাদের পূর্বে নূহের জাতি মিথ্যারোপ করেছিল ৷ তারা মিথ্যারোপ করেছিল আমার বান্দা নূহের প্রতি ৷ আর বলেছিল, সে তো একজন পাগল ৷ তারা তাকে (নানাভাবে) হুমকিও দিয়েছিল ৷ অতঃপর নূহ তাঁর রবকে বিনয় সহকারে ডেকে বলল, 'নিশ্চয়ই আমি অসহায়, অতএব তুমিই আমাকে সাহায্য কর ৷' অতঃপর আমি প্রবল বৃষ্টি বর্ষণের মাধ্যমে আকাশের দ্বারসমূহ খুলে দিলাম আর ভূমি (স্তর বিদীর্ণ করে তা ) থেকে পানির প্রচন্ড প্রবাহ নির্গত করলাম ৷ অতঃপর (আসমান ও যমীনের) পানি মিলিত হল এক পরিকল্পিত কাজে ৷ আমি নূহকে আরোহণ করালাম এক কাষ্ঠ ও পেরেক নির্মিত জলযানে ৷ যা চলত আমার দৃষ্টির সামনে ৷ এটা তার পক্ষ থেকে প্রতিশোধ ছিল যাকে অস্বীকার করা হয়েছিল ৷ অতএব (দেখে নাও) কত কঠিন ছিল আমার শাস্তি ও সতর্কবাণী ! "(সূরা ক্বমার ৫৪:৯-১৬)
وقال اركبوا فيها بسم الله مجرىها ومرسٰها- ان ربي لغفور رحيم ٥ وهي تجريبهم في موج كالجبال- ونادي نوح ن ابنه وكان في معزل يٰبني اركب مّعنا ولا تكن مع الكفرين ٥ قال ساوي الي جبل يعصمني من الماء- قال لا عاصم اليوم من امر الله الا من رحم- وحال بينهما الموج فكان من المغرقين ٥
"নূহ বলল, তোমরা এতে (এই নৌকায়) উঠে এসো ! আল্লাহর নামেই এর গতি এবং এর স্হিতি (নির্ধারিত হবে) ৷ নিশ্চয়ই আমার রব অত্যন্ত ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু ৷ অতঃপর সেই নৌকা তাদেরকে বয়ে নিয়ে চলল পর্বতসম ঢেউয়ের মধ্য দিয়ে ৷ এবং নূহ তাঁর ছেলেকে আহ্বান জানালো আর তখন তাঁর ছেলে দূরবর্তী এক জায়গায় দাঁড়িয়ে ছিল ৷ (সে বলল), হে আমার ছেলে ! আমাদের সঙ্গে উঠে এসো আর কাফেরদের সাথে থেকো না ৷ তার ছেলে বলল, আমি কোন উঁচু পর্বতে আশ্রয় নেবো এবং তা আমাকে পানি থেকে বাঁচিয়ে দেবে ৷ নূহ বলল, আজ আল্লাহর আযাব থেকে কেউ বাঁচতে পারবে না কেবল যার প্রতি তিনি দয়া করবেন সে ব্যাতিত ৷ আর তখন (বিশাল) একটি ঢেউ তাঁদের উভয়কে বিচ্ছিন্ন করে দিল ৷ তৎক্ষণাৎ সে (তার ছেলে) নিমজ্জিতদের অন্তর্ভূক্ত হয়ে গেল ৷"(সূরা হূদ ১১:৪১-৪৩)

কি ছিল তাঁদের অস্বীকৃত ? এবার তা খতিয়ে দেখবার পালা
১ ৷ তারা মহান আল্লাহকে একক সত্য ইলাহ সাব্যস্ত করেনি অর্থাৎ ভালবাসা,বিনয় ও ইবাদতগত ভয়ের সবটুকু তারা মহান আল্লাহর জন্য সাব্যস্ত করেনি ৷(২) যদিও তারা মহান আল্লাহকে বিশ্বাস করত ৷(৩) আল্লাহ তাআলা বলেন,
لقد ارسلنا نوحا الي قومه فقال يقوم اعبدوا الله ما لكم من اله غيره- اني اخاف عليكم عذاب يوم عظيم ٥ قال الملأ من قومه انا لنرىك في ضلل مبين ٥
"নিশ্চয়ই আমি নূহকে পাঠিয়েছিলাম তাঁর জাতির নিকট ৷ সে তখন বলল: হে আমার জাতি ! তোমরা কেবল আল্লাহর ইবাদত কর ৷ আল্লাহ ছাড়া তোমাদের সত্য কোন ইলাহ নেই ৷ আমি তোমাদের ব্যাপারে এক মহা শাস্তি দিবসের ভয় রাখি ৷ তার জাতির সর্দারগণ বলল, নিশ্চয়ই আমরা তোমাকে স্পষ্ট গোমরাহীতে নিমজ্জিত দেখতে পাচ্ছি ৷"(সূরা আরাফ ৭:৫৯-৬০)
তারা নানান কৌশলে নিজেদের সেই আহবান থেকে ফিরিয়ে রাখত যেমনটি নূহ (عليه ويلم) মহান আল্লাহকে বলেছিলেন,
قال رب اني دعوت قومي ليلا ونهارا ٥ فلم يزدهم دعاءي الا فرارا ٥ واني كلما دعوتهم لتغفر لهم جعلوا اصابعهم في اذانهم واستغشوا ثيابهم واصروا واستكبروا استكبارا ٥
"নূহ বলল, হে আমার রব ! নিশ্চয়ই আমি আমার জাতিকে দিবা রাত্র দাওয়াত দিয়েছি ৷ কিন্তু আমার দাওয়াত কেবল তাঁদের পলায়নকেই বৃদ্ধি করেছে ৷ আর আমি তাদেরকে আহ্বান জানিয়েছি যেন তুমি তাদেরকে ক্ষমা করো (ততোবারই) তারা নিজ কানে আঙ্গুল প্রবেশ করিয়েছে, কাঁপড় দিয়ে মুখ ঢেঁকে নিয়েছে, জেদ ও অহমিকা প্রদর্শন করেছে এবং চরম ঔদ্ধত্য প্রদর্শন করেছে ৷"(সূরা নূহ ৭১:৫-৭)

২৷ তারা প্রাধান্য দিয়েছিল তাদের পিতৃ-পুরুষদের মাধ্যমে চলে আসা বিশ্বাসকে ৷ যেমন তারা নূহ (عليه وسلم) কে বলেছিল,
ما سمعنا بهذا في ابائنا الاولين -
"এসব কথাতো আমাদের পূর্ববর্তী পিতৃপুরুষদের সময়তেও শুনিনি ৷"(সূরা মু'মিনুন ২৩:২৪)

৩৷ তারা নেতৃস্হানীয় ও ধন্যঢ্য ব্যাক্তির কথাকে প্রাধান্য দিয়েছিল যারা নূহ (عليه وسلم) এর শিক্ষার বিরুদ্ধে তাদেরকে(৪) বুঝাতো এবং তারা নূহ (عليه وسلم) এর ওহীপ্রাপ্ত দ্বীনকে অস্বীকার করেছিল ৷ নূহ (عليه وسلم) মহান আল্লাহকে বলেছিলেন,
قال نوح رب انهم عصوني وتبعوا من لم يزذه ماله وولده الا خسارا ٥ ومكروا مكرا كبارا ٥
"নূহ বলেছিল, হে আমার রব ! নিশ্চয়ই তারা আমাকে অমান্য করেছে এবং অনুসরণ করেছে এমন লোকদের যাদের ধন-সম্পদ ও সন্তান-সন্ততি কেবল তাদের ক্ষতিই বৃদ্ধি করেছে ৷ আর তাঁরা ভয়ানক চক্রান্ত(৫) করেছে ৷"(সূরা নূহ ৭১:২১-২২)

৪৷ তারা তাদের মধ্যকার সৎলোকদের বা নেককার বান্দাদের মূর্তি বানিয়েছিল শয়তানের ধোঁকায় পড়ে ৷ তাদেরকে তারা ইলাহ হিসেবে গ্রহণ করেছিল যদিও ইলাহ হবার একমাত্র অধিকার কেবল এবং কেবল মহান আল্লাহ তাআলার৷(৬) 
ইবনে আব্বাস (رضي الله عنه) বলেন,
صارت الاوثان التي كانت في قوم نوح في العرب بعد اما ود كانت لكلب بدومة الجندل واما سواع كانت لهذيل واما يغوث فكانت لمراد ثم لبني غطيف بالجوف عند سبا واما يعوق فكانت لهمدان واما نسر فكانت لحمير لال ذي الكلاع اسماء رجال صالحين من قوم نوح فلما هلكوا اوحي الشيطن الي قومهم ان انصبوا الي مجالسهم التي كانوا يجلسون انصابا وسموىها باسمائهم ففعلوا فلم تعبد حتي اذا هلك اولئك وتنسخ العلم عبدت—
"নূহ (عليه وسلم) এর জাতির মূর্তিপূজা পরবর্তীতে আরবদের মাঝে বিস্তার লাভ করে ৷ ওয়াদ হলো দাওমাতুল জান্দাল শহরের কাল্ব গোত্রের পূজনীয় মূর্তি ৷ সুয়া হলো হুযাইল গোত্রের মূর্তি ৷ ইয়াগুস প্রথমে মুরাদ গোত্রের মূর্তি ছিল পরে তা বনু গাতীফ গোত্রের হয়ে যায় ৷ এদের অবস্হার ছিল সাবার নিকটবর্তী জাওফ নামক স্হান ৷ ইয়াঊক ছিল হামদান গোত্রের মূর্তি ৷ নাসর ছিল যুলকালা গোত্রের হিমইয়ার শাখার মূর্তি ৷ এগুলো (মূর্তিগুলোর নাম) মূলত নূহ (عليه وسلم) জাতির সৎলোকদের নাম ৷ যখন তারা মারা গেল শয়তান তাদের জাতির অন্তরে একথা ঢেলে দিল যে, তাদের মজলিসে যে স্হানে তারা বসত সেখানে প্রতিকৃতি নির্মান কর আর তাদের নামেই এগুলোর নামকরণ কর ৷ তখনও সেগুলোর ইবাদত করা হত না ৷ কিন্তু যখন তারা সকলে মারা গেল এবং মূর্তিগুলোর ব্যাপারে সত্যিকারের জ্ঞান বিলুপ্ত হলো তখন তারা এগুলোর ইবাদত শুরু করে দিল ৷(৭)
এদের মাধ্যমে তারা সাহায্য, বৃষ্টি ইত্যাদি প্রার্থনা করত ৷(৮)

আমাদের জন্য শিক্ষা

১৷ আমাদের সকল কাজ হবে কেবল মহান আল্লাহর তরে নিবেদিত ৷ আমরা মহান আল্লাহ এবং আমাদের মাঝে কোন নেক লোক, নবী বা অন্য কিছুকে মাধ্যম সাব্যস্ত করব না ৷ কেননা যারা এমনটি করে মহান আল্লাহ তাদেরকে মুসলিম নয় বরং মিথ্যারোপকারী এবং কাফের বা অস্বীকারকারী বলে আখ্যায়িত করেছেন ৷
الا لله الدين الحالص - والذين التخذوا من دونه اولياء ما نعبدهم الا ليقربونا الي الله زلفي- ان الله يحكم بينهم في ما هم فيه يختلفون- ان الله لا يهدي من هو كٰذب كفار ٥
"সাবধান ! নিশ্চয়ই চুড়ান্ত বিনয়, ভালবাসা ও ভয় সহকারে একনিষ্ঠভাবে ইবাদত(৯) পাওয়ার অধিকার কেবল মহান আল্লাহর ৷ আর তারা আল্লাহকে বাদ দিয়ে 'নৈকট্যের অভিভাবক'(১০) সাব্যস্ত করে (কেবল এ যুক্তিতে যে,) 'আমরা তাদেরকে বিনয়, ভালবাসা ও ভয় সহকারে ডাকি(৯) কেবল এজন্য যে, তারা আমাদেরকে আল্লাহর নিকট পৌছে দেবে, যেন আমরা আল্লাহর নৈকট্য অর্জন করতে পারি ৷' নিশ্চয়ই আল্লাহ কেয়ামতের দিন তাদের মাঝে ফয়সালা করে দেবেন যে বিষয়ে তাঁরা বিরোধ করেছিল ৷ নিশ্চয়ই আল্লাহ কোন মিথ্যারোপকারী, কাফেরকে পথ দেখান না ৷"(সূরা যুমার ৩৯:৩)

২৷ আমাদেরকে সবচেয়ে বেশী ভালবাসেন মহান আল্লাহ তাআলা ৷ তিনি চান বান্দা কোন রকম মাধ্যম ছাঁড়া সরাসরি তাঁর কাছে চাইবে ৷ তিনি তাঁর এবং বান্দার মাঝে মাধ্যম পছন্দ করেন না যেমনিভাবে একজন মা তাঁর ও তাঁর সন্তানের মাঝে চাকর, বুয়া, কাজের ছেলেকে মাধ্যম বানানো পছন্দ করেন না বরং এর দ্বারা তিনি অপমান বোধ করেন ৷ আর সেখানে মহান আল্লাহ কিভাবে তা পছন্দ করতে পারেন যেখানে তাঁর ভালবাসার কোন তুলনা হয় না ? 
সুতরাং আমাদেরকে ما لكم من اله غيره " আল্লাহ ছাড়া তোমাদের সত্য কোন ইলাহ নেই" একথার মর্মকে যথার্থভাবে বুঝতে হবে যেভবে তিনি বুঝিয়েছেন ৷ পাশাপাশি এর বিপরীতে চলা স্রোত বা দৃষ্টিভঙ্গি বা বিশ্বাসের ধারাকে জানার মাধ্যমো কড়ায় গন্ডায় পরিত্যাগ করতে হবে ৷
মহান আল্লাহ বলেন, 
فاعلم انه لا اله الا الله
"অতএব ভাল করে জেনে নাও, আল্লাহ ছাড়া সত্য কোন ইলাহ নেই ৷"(সূরা মুহাম্মদ ৪৭:১৯)

৩৷ সৃষ্টির সেরা মানুষের কেবল মহান আল্লাহর প্রতিই নত হওয়া মানায় অন্য কারও কাছে নয় নতুবা তাঁতে তাঁর মর্যাদা ক্ষুন্ন হবে ৷ কারণ সকল মানুষই সৃষ্টিগতভাবে সমানভাবে সম্মানিত আর অন্যসব সৃষ্টি তাঁদের নিম্নপর্যায়ের ৷ সুতরাং তারা তাদের সমপর্যায় বা নিম্ন পর্যায়ের কোন সৃষ্টির কাছে মাথা নত করবে না বরং কেবল সর্বশক্তিমান রব মহান আল্লাহর প্রতি নত হবে এটাই যৌক্তিক কথা ৷ মহান আল্লাহ বলেন,
ولقد كرمنا بني ادم وحملنهم في البر والبحر ورزقنهم من الطيبت وفضلنهم علي كثير ممن خلقنا تفضيلا ٥
"আর নিশ্চয়ই আমি বনী আদমকে সম্মানীত করেছি(১১) এবং তাদেরকে স্হলে ও জ্বলে বাহন দিয়েছি এব তাদেরকে দিয়েছি পবিত্র রিযিক্ব ৷ আর আমি যাদেরকে সৃষ্টি করেছি তাদের অনেকের উপর আমি তাদেরকে শ্রেষ্ঠত্ব দিয়েছি ৷"(সূরা বনী ইসরাইল ১৭:৭০)
وما خلقت الجن والانس الا ليعبدون ٥
"জ্বীন ও মানুষকে কেবল এবং কেবল আমার ইবাদত ছাড়া অন্য কোন উদ্দেশ্যে সৃষ্টি করিনি ৷"(সূরা যারিয়াত ৫১:৫৬)

৪৷ শিরক হলো সবচাইতে বড় জুলুম ৷ ফলে এর কারণে একটি জাতি মহাধ্বংসের কবলে নিপতিত হয় যখন তারা তা থেকে ফিরে না আসে ৷ যেমন মহান আল্লাহ বলেন,
ان الشرك لظلم عظيم -
"নিশ্চয়ই নিশ্চয়ই শিরক হলো সবচেয়ে বড় জুলুম ৷"(সূরা লুক্বমান ৩১:১৩)
ظهر الفساد في البر والبحر بما كسبت ايدى الناس ليذيقهم بعص الذي عملوا لعلهم يرجعون ٥ قل سيروا في الارض فانظروا كيف كان عاقبة الذين من قبل- كانوا اكثرهم مشركين ٥
"স্হলে ও জ্বলে বিপর্যয় ছড়িয়ে পড়েছে মানুষের হাত দ্বারা উপার্জিত কর্মের কারণে ৷ আমি তাদেরকে আমার শাস্তির কিছুটা শাস্তি আস্বাদন করাই যেন তারা ফিরে আসে ৷
বল ,তোমরা পৃথিবীতে ভ্রমণ কর ৷ ভেবে দেখ পূর্ববর্তীদের পরিণাম কি হয়েছিল ৷ তাদের অধিকাংশ ছিল মুশরিক ৷"(সূরা রূম ৩০: ৪১-৪২)

৫৷ মহান আল্লাহর শাস্তি বা পাঁকড়াও অত্যন্ত কঠিন হয়ে থাকে ৷ যেমন উপরে উল্লেখিত হয়ছে, মহান আল্লাহ বলেন,
فكيف كان عذابي ونذر ٥
"অতএব দেখে নাও কত কঠিন ছিল আমার শাস্তি ও সতর্কবাণী ৷"(সূরা ক্বমার ৫৪:১৬)
অন্য আরেকটি আয়াতে মহান আল্লাহ বলেন,
ان بطش ربك لشديد ٥
"নিশ্চয়ই তোমার রবের পাঁকড়াও অত্যন্ত কঠিন ৷"(সূরা বুরুজ ৮৫:১২)

৬৷ পীর ও অলী তো দূরের কথা, এমনকি মহান আল্লাহর আযাব থেকে নবীরাও কাউকে রক্ষা করতে পারেন না যেমনটি আমরা নূহ (عليه وسلم) এর ক্ষেত্রে তাঁর ছেলের ব্যাপারে লক্ষ্য করলাম ৷ তাই আমরা দেখি, মহান আল্লাহ নবী (صلي الله عليه وسلم) কে উদ্দেশ্য করে বলেছেন,
قل اني لا املك لكم ضرا ولا رشدا ٥ قل اني لن يجيرني من الله احد- ولن اجد من دونه ملتحدا ٥
"বল (হে নবী), নিশ্চয়ই আমি তোমাদের কোন ক্ষতি বা উপকার করার ক্ষমতা রাখি না ৷
বল,(হে নবী), মহান আল্লাহর কবল থেকে কেউ আমাকে রক্ষা করতে পারবে না এবং তিনি ব্যাতিত আমি কোন আশ্রয়স্হল পাব না ৷"(সূরা জ্বীন ৭২:২১-২২)
قل لا اقول لكم عندي خزائن الله ولا اعلم الغيب ولا اقول لكم اني ملك-ان اتبع الا ما يوحي الي- قل هل يستوى الاعمى والبصير - افلا تتفكرون ٥
"বল، আমি তোমাদেরকে বলিনা যে ,আমার কাছে আল্লাহর ধনভান্ডার রয়েছে, আমি এও বলিনা যে ,আমি গায়েবের জ্ঞান রাখি আর আমি এও বলিনা যে আমি একজন ফেরেশতা ৷ আমি তো কেবল তাঁরই অনুসরণ করি যা আমার প্রতি ওহী করা হয় ৷ বল, অন্ধ আর যে দেখতে পায় তারা উভয়ে কি সমান হতে পারে ৷ তোমরা কি চিন্তা করবে না ৷"(সূরা আনআম ৬:৫০)
আবূ হুরায়রা (رضي الله عنه) থেকে বর্ণিত , তিনি বলেন
قام رسول الله صلي الله عليه وسلم حين انزل الله عز وجل 'وانذر عشيرتك الاقربين' قال يا معشر قريش او كلمة نحوها - اشتروا انفسكم لا اغني عنكم من الله شيئا - يا بني عبد مناف لا اغني عنكم من الله شىئا - يا عباس بن عبد المطلب لا اغني عنك من الله شىئا ويا صفية عمة رسول الله لا اعني عنك من الله شىئا ويا فاطمة بنت محمد سليني ما شئت من مالي لا اغني عنك من الله شىئا-
"যখন আল্লাহ عز وجل এই আয়াত নাযিল করলেন, "وانذر عشيرتك الاقربين"(যার অর্থ: তোমার নিকটাত্নীয়দেরকে সতর্ক কর) তখন রাসূলুল্লাহ (صلي الله عليه وسلم) উঠে দাঁড়িয়ে বললেন, "হে কুরাইশ সম্প্রদায় !" অথবা এরকমই কিছু দ্বারা সম্বোধন করে বললেন, "তোমরা নিজেদের কর ৷ আল্লাহর আযাব থেকে রক্ষা করতে আমি তোমাদের কোন উপকার করতে পারব না ৷
হে বনী আবদে মানাফ ! আল্লাহর আযাব থেকে রক্ষা করতে আমি তোমাদের কোন উপকার করতে পারব না ৷
হে আব্বাস ইবনে আব্দুল মুত্তালিব ! আল্লাহর আযাব থেকে রক্ষা করতে আমি তোমার কোন উপকার করতে পারব না ৷
হে সফিয়্যাহ ! আল্লাহর রাসূল (صلي الله عليه وسلم) অর ফুফু ! আল্লাহর আযাব থেকে রক্ষা করতে আমি তোমার কোন উপকার করতে পারব না ৷
হে মুহাম্মদ (صلي الله عليه وسلم) এর কন্য ফাত্বিমা ! আমার ধনসম্পদ থেকে যা ইচ্ছা চেয়ে নাও ৷ আল্লাহর আযাব থেকে রক্ষা করতে আমি তোমার কোন উপকার করতে পারব না ৷"(১২)

৭৷ দ্বীনকে বুঝার ক্ষেত্রে বা গ্রহণের ক্ষেত্রে নেতৃস্থানীয় লোক, সমাজ কি বলে, কারও ডিগ্রী বা সার্টিফিকেট, সংখ্যাগরিষ্ঠতাকে বা পিতৃপুরুষদের উদ্ধৃতি দেওয়া ঠিক হবে না, বরং দেখতে হবে নবী (صلي الله عليه) এর নিয়ে আসা ওহীর সাথে মিল খাচ্ছে কি না এবং তা হবে দলীলের ভিত্তিতে ! নতুবা তা বাতিল বলে গণ্য হবে ৷
যেমন নূহ (عليه وسلم) এর জাতি বলেছিল,
ما سمعنا بهذا في ابائنا الاولين —
"এসব কথাতো আমাদের পূর্ববর্তী পিতৃপুরুদের সময়তেও শুনিনি ৷"(সূরা মুমিনূন ২৩:২৪)
মহান আল্লাহ নবী (صلي الله عليه وسلم) কে উদ্দেশ্য করে বলেন,
وان تطع اكثر من في الارض يضلوك عن سبيل الله - ان يتبعون الا الظن وان هم الا يخرصون ٥
"আর আপনি যদি যমীনে বসবাসকারী অধিকাংশ লোকের অনুসরণ করেন তবে তারা আপনাকে আল্লাহর পথ থেকে বিচ্যুত করে দেবে ৷ তারাতো কেবল আন্দাজ-অনুমানের অনুসরণ করে আর আন্দাজ-অনুমান নির্ভর কথা বলে থাকে ৷"(সূরা আনআম ৬:১১৬)
আয়েশা (رضي الله عنها) বলেন,
قال رسول الله صلي الله عليه وسلم من احدث في امرنا هذا ما ليس فيه فهو رد -
রাসূলুল্লাহ (صلي الله عليه وسلم ) বলেছেন,"কেউ যদি (দ্বীনের নামে) এমন কোন বিষয়ের উদ্ভাবন করে যা আমাদের দ্বীনের মধ্যে নেই তবে তা প্রত্যাখ্যাত ৷"(১৩)
অন্য বর্ণনায় এসেছে,
من عمل عملا ليس عليه امرنا فهو رد -
"যে ব্যক্তি এমন কোন আমল করল যা আমাদের দ্বীনের মধ্যে নেই তা প্রত্যাখাত ৷"(১৪)

৮৷ অন্যান্য সৃষ্টির মত পানি, ভূপৃষ্ঠ ও আসমানও মহান আল্লাহর হুকুমের অধীন ৷ মহান আল্লাহ বলেন,
يسبح له ما في السموت والارض -
"আসমান ও যমীনের মধ্যে যা কিছু আছে সবই আল্লাহর পবিত্রতা ঘোষণা করে ৷"(সূরা হাশর ৫৯:২৪)

৯৷ "الا من رحم" —"যার উপর আল্লাহ দয়া করবেন সে ছাড়া" এই উক্তি দ্বারা প্রমাণিত হয় যে নবীগণ আল্লাহর রহমত বন্টনের অধিকার রাখেন না ৷ বরং তাঁরা নিজেরাও মহান আল্লাহর রহমতের অধীন ৷
জাবের (رضي الله عنه) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি নবী (صلي الله عليه وسلم) কে বলতে শুনেছি,
لا يدخل احدا منكم عمله الجنة ولا يجيره من النار ولا انا الا برحمة من الله —
"(মহান আল্লাহর রহমত ছাড়া) তোমাদের কেউ তার আমল দ্বারা জান্নাতে প্রবেশ করবে না এবং জাহান্নাম থেকে মুক্তি পাবে না আর আল্লাহর রহমত ছাড়া আমিও বাঁচতে পারব না ৷"(১৫)
তাহলে অন্যদের কি অবস্হা ? 

১০৷ মূর্তিপূজা হারাম কাজ এবং জঘন্য শিরক ৷ কেবল ইসলামে নয় বরং হিন্দু ধর্মগ্রণ্থেও ৷ 
মহান আল্লাহ বলেন,
يا ايها الذين امنوا انما الخمر والميسر والانصاب والازلام رجس من عمل الشيطن- فاجتنبوه لعلكم تفلحون ٥ 
"হে ইমানদারগণ ! নিশ্চয়ই মদ, জুয়া, মূর্তি ও ভাগ্য নির্ধারক শরসমূহ কেবল ঘৃণীত শয়তানের কাজ ৷ কাজেই তোমরা সেগুলো বর্জন যেন তোমরা সফলকাম হতে পার ৷"(সূরা মায়িদাহ ৫:৯০)
হিন্দু ধর্মগ্রণ্থ বলছে, "না তস্য প্রতিমা অস্তি ৷"
অর্থ: "ইশ্বরের কোন প্রতিমূর্তি নেই ৷ (যজুর্বেদ সহিংসতা অধ্যায় ৩২, কণিকা ৩)

১১৷ যদি কারও মূর্তি নির্মান ও পূজা হারাম হয় তবে কারও কবর পাকা, তাতে মসজিদ নির্মান করা, ওরস করা, সিজদা ও মানত ইত্যাদি অবশ্যই তার চেয়ে জঘন্য কাজ ও শিরক বলে বিবেচিত হবে এবং শয়তানের বড় ধরনের ধোঁকা বলে বিবেচিত হবে ৷
আবূল হাইয়্যাজ আসাদী (رحيمه الله) বলেন, আলী ইবনে আবূ তালেব (رضي الله عنه) আমাকে বলেছেন,
الا ابعثك علي ما بعثني عليه رسول الله صلي الله عليه وسلم ان لا تدع تمثالا الا طمسته ولا قبرا مشرفا الا سويته —
"আমি কি আপনাকে সে কাজের জন্য পাঠাব না যে কাজের জন্য আমাকে আল্লাহর রাসূল (صلي الله عليه وسلم) পাঠিয়েছেন ৷ তা ছিল হল এই যে,"তুমি কোন প্রতিকৃতিকে চূর্ণ-বিচূর্ণ না করে ছাঁড়বে না এবং কোন উঁচু কবরকে সমতল না করে ছাঁড়বে না ৷"(১৬)
জাবের (رضي الله عنه) বলেন,
نهي رسول الله صلي الله عليه وسلم ان يجصص القبر وان يقعد عليه وان يبني عليه-
"রাসূলুল্লাহ (صلي الله عليه وسلم) কবর পাঁকা করতে, তার উপর বসতে এবং তার উপর গৃহ নির্মাণ করতে নিষেধ করেছেন ৷"(১৭)
আয়েশা (رضي الله عنها) বর্ণনা করেন,
ان ام حبيبة وام سلمة ذكرتا كنيسة راينها بالحبشة فيها تصاوير فذكرتا للنبي صلي الله عليه وسلم فقال ان اولئك اذا كان فيهم الرجل الصالح فمات بنوا علي قبره مسجدا وصوروا فيه تلك الصور - فاولئك شرار الخلق عند الله يوم القيامة-
" একদিন উম্মে হাবীবা (رضي الله عنها) ও উম্মে সালামাহ (رضي الله عنها) একটি গির্জার কথা বললেন যা তাঁরা হাবাশায় দেখেছিলেন, তাতে বেশ কিছু মূর্তি ছিল ৷ ব্যাপারটা তাঁরা নবী (صلي الله عليه وسلم) কে জানালে তিনি বললেন, "নিশ্চয়ই এরা হলো সে সমস্ত লোক, যখন তাদের মধ্যকার কোন নেককার লোক মারা যেত তখন তার কবরের উপর মসজিদ বানাতো এবং তার ভিতর ঐ লোকের অাকৃতির মত প্রতিকৃতি নির্মাণ করে রাখত ৷ ফলে তারা কিয়ামতের দিন আল্লাহর নিকট সবচেয়ে নিকৃষ্ট সৃষ্টিরূপে গণ্য হবে ৷"(১৮)
আয়িশাহ (رضي الله عنها) বলেন, 
قال النبي صلي الله عليه وسلم في مرضه الذي لم يقم منه لعن الله اليهود اتخذوا قبور انبيائهم مساجد قالت عائشة لو لا ذلك لابرز قبره خشي ان يتخذ مسجدا-
"রাসূলুল্লাহ (صلي الله عليه وسلم ) তাঁর রোগক্রান্ত অবস্হায়, যে রোগ থেকে তিনি আর সেরে উঠেননি , (এমন অবস্হায়) তিনি বলেন, "ইহুদীদের উপর আল্লাহর অভিশাপ বর্ষিত হোক ! তারা তাদের নবী-পয়গম্বরদের কবরকে মসজিদ বানিয়েছে ৷
আয়িশাহ (رضي الله عنها) বলেন, "তিনি এমনটি না বললে তার কবরকেও মসজিদ বানানোর আশঙ্কা ছিল ৷"(১৯)

রাসূলুল্লাহ (صلي الله عليه وسلم) বলেছেন,
ولا تجعلوا قبري عيدا -
"তোমরা আমরা কবরকে ঈদ বা ওরস-উৎসব পালনের স্হানে পরিণত করো না ৷ ৷"(২০)
রাসূলুল্লাহ (صلي الله عليه وسلم) আল্লাহর কাছে এই বলে দোয়া করতেন,
اللهم لا تجعل قبري وثنا يعبد اشتد غضب الله علي قوم اتخذوا انبيائهم مساجدا-
"হে আল্লাহ ! তুমি আমার কবরকে মূর্তিপূজার অনুরূপ কোন ইবাদত ও কাঁকুতি মিনতির স্হানে পরিণত হতে দিও না ৷ নিশ্চয়ই ঐ জাতির উপর আল্লাহ অত্যন্ত রাগান্বিত হন যারা তাদের নবী-পয়গম্বরদের কবরকে মসজিদ বানায় ৷"(২১)

১২৷ শয়তান ফাঁকি দিতে পারে আপনাকে আমাকেও মানুষ কিংবা ওলীর রূপ ধারণ করে বা ছদ্মবেশ নিয়ে কিংবা অন্যকোনভাবে ৷ আমাদের উচিত হবে মহান আল্লাহ তার নিম্নোক্ত বাণীর আলোকে যেভাবে তিনি ইমান ও শিরককে পৃথক(২২) করেছেন তা পূর্ণাঙ্গভাবে বিশ্বাস করা এবং শয়তান থেকে দূরে থাকা ৷
মহান আল্লাহ বলেন,
يا ايها الذين امنوا ادخلوا في السلم كافة - ولا تتبعوا خطوة الشيطن - انه لكم عدو مبين ٥
"হে ইমানদারগণ ! পরিপূর্ণভাবে মহান আল্লাহর কাছে আত্মসমর্পণ(২২) কর আর শয়তানের পদাঙ্ক অনুসরণ করো না ৷ নিশ্চয়ই সে তোমাদের প্রকাশ্য শত্রু ৷"(সূরা বাক্বারাহ ২:২০৮)

১৩৷ ভূলকে আগলে রাখা যাবে না ৷ দ্বীধাহীনভাবে আল্লাহ ও তাঁর রাসূল (صلي الله عليه وسلم) দেওয়া ইমানের ধারাগুলো অবিলম্বে মেনে নিতে হবে এবং এর বিপরীতে গড়ে ওঠা সবরকম বিশ্বাস,মতবাদ,তরীক্বা, দৃষ্টিভঙ্গী ইত্যাদিকে অস্বীকার করতে হবে এবং পরিত্যাগ করতে হবে ৷ 
কি ভাবছেন ? অনেক বড় ভূল করে ফেলেছেন ?
ভাবনার কিছু নেই ৷ মহান আল্লাহ আপনাকে অবশ্যই ক্ষমা করবেন ৷ لتغفرلهم শব্দ দ্বারা এমনটিই তিনি বুঝিয়েছেন ৷ অর্থাৎ আপনি শিরক করে থাকলেও মৃত্যুর আগে ক্ষমা চাইলে অবশ্যই আল্লাহ আপনাকে ক্ষমা করবেন ৷
ومن يعمل سوءا او يظلم نفسه ثم يستغفر الله يجد الله غفورا رحيما —
"আর যে কোন মন্দ কর্ম করে ফেলে অথবা নিজের উপর জুলুম(২৪) করে ফেলে, অতঃপর আল্লাহর কাছে ক্ষমা চায় তখন সে আল্লাহকে অত্যন্ত ক্ষমাশীল ও দয়াময় হিসেবে পাবে ৷"(সূরা নিসা ৪:১১০)

রাসূলুল্লাহ (صلي الله عليه وسلم) ইমানের এই ধারাগুলোকে মেনে নেওয়ার প্রতি গুরুত্বারোপ করেছেন এবং পাশাপাশি সবচাইতে উত্তমভাবে তওবার নিয়ম শিক্ষা দিয়েছেন ৷ নিচের হাদীসটি ভাল করে পড়লেই তা বুঝে আসবে ৷

শাদ্দাদ ইবনে আওস (رضي الله عنه) বলেন, রাসূলুল্লাহ (صلي الله علبه وسلم) বলেছেন,
سيد الاستغفار ان يقول "اللهم انت ربي لا اله الا انت خلقتني وانا عبدك وانا علي عهدك ووعدك ما استطعت اعوذبك من شر ما صنعت ابوء لك بنعمتك علي وابوء لك بذنبي فاغفرلي فانه لا يغفر الذنوب الا انت" - قال ومن قالها من النهار موقنا بها فمات من يومه قبل ان يمسي فهو من اهل الجنة ومن قالها من الليل وهو موقن بها فمات قبل ان يصب فهو من اهل الجنة -
"সবচেয়ে বড় ইস্তিগফার হলো যখন বান্দা বলে,'হে আল্লাহ ! তুমিই আমার রব ৷ তুমি ছাড়া সত্য কোন ইলাহ নেই ৷ তুমি আমাকে সৃষ্টি করেছ ৷ আর আমি তোমার বান্দা ৷ আমি যথাসাধ্য তোমার সাথে কৃত প্রতিজ্ঞা ও অঙ্গীকারের উপর আছি ৷ আমি তোমার কাছে আমার কৃতকর্মের অনিষ্ট থেকে আশ্রয় চাচ্ছি ৷ আমি তোমার কাছে আমাকে দেওয়া তোমার নেয়ামতের কথা স্মরণ করছি ৷ আমি তোমার কাছে আমার পাপকাজ স্বীকার করছি ৷ কাজেই তুমি আমাকে ক্ষমা করে দাও ৷ নিশ্চয়ই তুমি ছাড়া ক্ষমা করার কেউ নেই ৷'
রাসূলুল্লাহ (صلي الله عليه وسلم) বলেন, 'আর যে ব্যক্তি এ কথাগলো দৃঢ় বিশ্বাসের সাথে সকালে বলবে ,তখন যদি সে ঐদিন সন্ধ্যা হওয়ার পূর্বে মারা যায় তবে সে জান্নাতিদের অন্তর্ভূক্ত হবে ৷ আর যে দৃঢ় বিশ্বাসের সাথে সন্ধ্যায় একথাগুলো বলবে , সকাল হবার পূর্বে সে মারা গেলে সে জান্নাতিদের অন্তর্ভূক্ত হবে ৷' "(২৪)


এছাড়াও আরও অনেক শিক্ষা নিয়ে আলোচনা করা যেতে পারে তবে এখানে আমি কেবল আল্লাহর তাওহীদের সাথে সম্পর্কিত কয়েকটি বিষয় নিয়ে আলোচনা পর্যন্ত সীমাবদ্ধ থাকলাম ৷ 
মহান আল্লাহ আমাকে ও আপনাকে উপরোক্ত আলোচনা থেকে শিক্ষা গ্রহণের তৌফিক দিন এবং ইমানকে শিরক মুক্ত রাখার তৌফিক দিন !!!

টীকাঃ
১৷ সূরা রূম ৩০:৬-১০ ,৪১-৪২ সূরা নিসা ৪:৪০ ৷

২৷ ইবনে তাইমিয়্যাহ বলেন, 
فالاله هو الذي يالهه القلب بكمال الحب والتعظيم والاجلال والاكرام والخوف الرجاء ونحو ذلك
"কাউকে ইলাহ মানার অর্থ হবে তার প্রতি হৃদয় মনের পূর্ণ একাগ্রতা, ঐকান্তিকতা, ভালবাসা ও পূর্ণ সম্মানবোধ, নৈকট্য, সবর শোকর, আশা নিরাশা , ভয়ভীতি ইত্যাদির পরিপূর্ণ আবেগানুভূতির মাধ্যমে তাঁর প্রতি ঝুঁকে পড়া ৷"(আল উবূদিয়্যাহ, আরবী,ইবনে তাইমিয়্যাহ ,পৃষ্ঠা ৩০-৩১ ৷ অথবা দেখুন, ইবাদতের মর্মকথা, মূল: ইবনে তাইমিয়্যাহ, অনুবাদ: বি.এম.এ খালেক মজুমদার আধুনিক প্রকাশনী , পৃষ্ঠা ২৮-২৯ )

৩৷ সূরা মুমিনুল ২৩:২৪-২৫ অনুযায়ী ৷

৪৷ সূরা নূহ ৭১:২১-২৩, সূরা মুমিনূন ২৩:২৩-২৬ , সূরা শুয়া'রা ২৬:১০৫-১১৬

৫৷ ইবনে কাসীর সূরা সাবা ৩৪:৩৩ ও সূরা নূহ ৭১:২৩ অনুযায়ী এর ব্যাখ্যা করেছেন, 
باتباعهم في تسويلهم لهم بانهم علي الحق والهدي —
"তারা তাদের অনুসারীদের ব্যাপারে ভিষণ প্রতারণামূলক ষড়যণ্ত্র করেছিল এবং তাদেরকে এ ধারণা দিত যে তারা সঠিক পথের অনুসারী এবং হেদায়াতপ্রাপ্ত ৷"(তাফসীর ইবনে কাসীর, ৮ম খন্ড, পৃষ্ঠা ২৩৪)
এছাড়াও আরও নানা রকম চক্রান্তের সন্ধান পাওয়া যায় ৷ বিস্তারিত পড়ুন সূরা মুমিনূন ২৩:২৩-২৬ , সূরা শুয়া'রা ২৬:১০৫-১১৬, সূরা আরাফ ৭:৫৯-৬৪, সূরা হূদ ১১:৩৬-৪৮ ইত্যাদি ৷
৬৷ لا اله الا الله তাঁরই সাক্ষ্য দেয় ৷ দেখুন, সূরা যুমার ৩৯:৩, সূরা বাক্বারাহ ২:২৫৫, সূরা হাশর ৫৯:২২-২৪ ইত্যাদি ৷

৭৷ সহীহ বুখারী, অধ্যায় ৬৫: কুরআন মাজীদের তাফসীর পর্ব, হাদীস ৪৯২০, হাদীস ও পর্বসূচীর নম্বর বিন্যাস : মুহাম্মদ বিন হাজ্জ্বাজ ৷

৮৷দেখুন তাফসীর ইবনে কাসীর, ৮ম খন্ড, পৃষ্ঠা ২৩৫

৯৷ ইবাদতের মর্মকথা ,মূল: ইবনে তাইমিয়্যাহ ,আধুনিক প্রকাশনী ,পৃষ্ঠা ১৩-১২৪ ৷

১০৷ ما نعبدهم الا ليقربونا الي الله زلفي - আয়াতের এই অংশ অনুযায়ী اولياء শব্দের অর্থ করা হয়েছে ৷

১১৷ অর্থাৎ মানুষকে এমন সব বৈশিষ্ট্য দান করা হয়েছে যা অন্য কোন সৃষ্টির মধ্যে নেই ৷ দেখুন, সংক্ষিপ্ত তাফসীর, আবূ বকর যাকারিয়া মাদানী, পৃষ্ঠা ১৫১১, টীকা নং ১ ৷

১২৷ সহীহ বুখারী ,অধ্যায় ৫৫:অসীয়ত পর্ব, অনুচ্ছেদ ১১, হাদীস নং ২৭৫৩ ৷

১৩৷ দেখুন সহীহ বুখারী, অধ্যায় ৫৩: বিবাদ মিমাংসা পর্ব, অনুচ্ছেদ ৫, হাদীস ২৬৯৭, হাদীস ও পর্বসূচীর নম্বর বিন্যাস :মুহাম্মদ বিন হাজ্জ্বাজ ৷
অথবা দেখুন সহীহ মুসলিম, অধ্যায় ৩১: বিচার ফয়সালা পর্ব, অনুচ্ছেদ ৮, হাদীস ১৭১৮, হাদীস ও পর্বসূচীর নম্বর বিন্যাস :ফুয়াদ আব্দুল বাক্বী ৷
অথবা দেখুন রিয়াদুস সালেহীন ১৭৩, বিশুদ্ধ সূত্রে ,তবে এখানে فيه এর স্হলে منه রয়েছে ৷

১৪৷ সহীহ মুসলিম, অধ্যায় ৩১: বিচার ফয়সালা পর্ব, অনুচ্ছেদ ৮, হাদীস ১৭১৮, (১৮/.....) হাদীস ও পর্বসূচীর নম্বর বিন্যাস :ফুয়াদ আব্দুল বাক্বী ৷
১৫৷ সহীহ মুসলিম ,হাদীস ২৮১৭
১৬৷ সহীহ মুসলিম , হাদীস ৯৬৯
১৭৷ সহীহ মুসলিম, হাদীস ৯৭০
১৮৷ সহীহ বুখারী , হাদীস ৪২৭
১৯৷ সহীহ বুখারী ,হাদীস ৪৪৪১
২০৷ সুনান আবূ দাউদ ২০৪২, সনদ:সহীহ, তাহক্বীক :আলবানী
২১৷ মুয়াত্তা ইমাম মালেক, হাদীস নং ৪০২, ইমাম শাফেঈর শর্তে সহীহ

২২৷ সূরা ইমরানের ৮৪-৮৫ নং আয়াতে ইমানকে ইসলাম বলা হয়েছে ৷ এছাড়াও সহীহ বুখারী ৮ নং হাদীস, সহীহ মুসলিমে ৮ নং হাদীস সহ আরও অনেক সহীহ হাদীসে ইসলামের সংজ্ঞায় প্রথমেই আল্লাহ ও রাসূলের প্রতি ইমানকে পরিচয় করানো হয়েছে ৷

২৩৷ ان الشرك لظلم عظيم - নিশ্চয়ই নিশ্চয়ই শিরক হলো সবচেয়ে বড় জুলুম ৷ সূরা লূক্বমান ৩১:১৩ ৷
২৪৷ সহীহ বুখারী, হাদীস নং ৬৩০৬

কৃতজ্ঞতা : 
১৷ বই: নবীদের কাহিনী, আসাদুল্লাহ আল গালিব ৷
২৷ আল কোরআনের সহজ সরল অনুবাদ, আল কোরআন একাডেমী লন্ডন ৷
৩৷ ihadis app, কুরআন মাজিদ app, Quran bangla app etc

নূহ (عليه وسلم) এর মহাপ্লাবণ এবং কিছু শিক্ষা / মেরাজুল ইসলাম প্রিয়

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন