শুক্রবার, ৩ আগস্ট, ২০১৮

যখন তুমি পরীক্ষার্থী

যখন তুমি পরীক্ষার্থী .......

সকল প্রশংসা সমস্ত সৃষ্টজগতের একমাত্র রব আল্লাহ তাআলার জন্য ৷
আর অসংখ্য দরুদ ও সালাম সমগ্র মানবতার মহান মুক্তিদূত বিশ্বনবী মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ ( ﺻﻠﻲ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪ ﻭﺳﻠﻢ ) এর প্রতি৷

অতঃপর হে পরীক্ষার্থীগণ !
অবশ্যই তুমি কেবল আল্লাহর জন্য পড়াশুনা করবে ৷
আল্লাহ তাআলা বলেছেন: "পড় তোমার রবের নামে যিনি তোমাকে সৃষ্টি করেছেন ৷" (সূরা আলাক্ব ৯৬:১)
তোমার সামর্থ্যের ভিত্তিতে পরীক্ষাপূর্ব প্রস্তুতি নাও যেন তুমি জ্ঞান ভিত্তিক উত্তর দিতে সক্ষম হও! আর জেনে রাখ আল্লাহর এই বাণী,"মানুষকে আমি শ্রম নির্ভর করেই সৃষ্টি করেছি ৷"( সূরা বালাদ ৯০:৪)
একমাত্র আল্লাহর উপর ভরসা রাখ অন্য কোন ব্যাক্তি বা বস্তুর উপর নয়
"আর যে আল্লাহর উপর ভরসা করে তার জন্য তিঁনিই যথেষ্ট ৷ নিশ্চয়ই আল্লাহ তার কাজ পূর্ণ করবেন ৷ আল্লাহ সবকিছুর জন্য একটি পরিমাপ স্থির করে রেখেছেম ৷ "( সূরা ত্বলাক্ব ৬৫:৩)
তুমি তাবিজ বা সুতা বা এই জাতীয় অন্য কিছু ঝুলাবে না কেননা নবী ( ﺻﻠﻲ ﺍﻟﻠﻪ ﻏﻠﻴﻪ ﻭﺳﻠﻢ ) বলেছেন,"যে কোন কিছু ঝুলাবে তাকে তাঁর উপরই সোপর্দ করা হবে ৷"( সুনান তিরমিযী, চিকিৎসা পর্ব, অধ্যায় ২৬,হাদীস ২০৭২, হাদীসের মান:সহীহ , তাহক্বীক: আলবানী)
তুমি কোন মাজারে মানত করবে না ৷ কেননা রাসূল ( ﺻﻠﻲ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪ ﻭﺳﻠﻢ ) সেখানে মানত করাকে নয় বরং শুধুমাত্র কবরকে ঘিরে মাজার বা মসজিদ নির্মাণ করার কারণে অভিশাপ দিয়েছেন ৷ সুতরাং বুঝতেই পারছ সেখানে মানত করা বা ওখানে গিয়ে উক্ত মৃত ব্যাক্তির ওসিলায় কিছু চাওয়া কতটা গর্হিত কাজ হবে বা আল্লাহর সন্তুষ্টি কামনা কতটা গর্হিত কাজ হবে ৷
আবু হুরায়রাহ ( ﺭﺿﻲ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻨﻬﻤﺎ ) বলেন,অবশ্যই রাসূল ( ﺻﻠﻲ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪ ﻭﺳﻠﻢ ) বলেছেন,"আল্লাহ ধ্বংস করুন ইহুদীদেরকে,তাঁরা তাদের নবী-পয়গম্বরদের কবরকে মসজিদ বানিয়েছে ৷"( সহীহ বুখারী, সালাত পর্ব, অধ্যায় ৮,অনুচ্ছেদ ৫৭, হাদীস ৪৩৭)
উম্মুল মু' মিনীন আয়েশাহ ( ﺭﺿﻲ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻨﻬﺎ ) থেকে বর্ণিত, উম্মে হাবীবা ( ﺭﺿﻲ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻨﻬﺎ ) ও উম্মে সালমাহ ( ﺭﺿﻲ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻨﻬﺎ ) একটি গির্জার কথা বর্ণনা করেন যা তাঁরা হাবাশায় দেখেছিলেন সেখানে 'তাসবীর' ছিল, নবী ( ﺻﻠﻲ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪ ﻭﺳﻠﻢ ) বললেন,"নিশ্চয়ই এরা হলো সে সমস্ত লোক,যখন তাদের মাঝে কোন সৎ ব্যাক্তি মৃত্যুবরণ করে তখন তাঁরা তাঁদের কবরকে মসজিদ বানিয়ে নেয় ৷ এবং সেখানে তারা সেই ব্যাক্তির আকৃতির মত তাসবীর বানায় ৷ কেয়ামতের দিন আল্লাহ তাআলার কাছে এরাই সবচেয়ে নিকৃষ্ট প্রাণীরূপে গণ্য হবে ৷"( সহীহ বুখারী,সালাত পর্ব, অধ্যায় ৮,অনুচ্ছেদ ৪৮,হাদীস ৪২৭)
সুতরাং, ,তুমি কেবল সরাসরি আল্লাহর কাছেই চাইবে যেমন আল্লাহ শিখিয়েছেন
"হে আমার রব ! আমার অন্তরকে প্রশস্ত করে দাও এবং 'আমার কাজকে সহজ করে দাও ৷ "( সূরা তোহা ২০:২৫-২৬)
অথবা বল,"হে আমার রব! আমার জ্ঞানকে বৃদ্ধি করে দাও ৷"( সূরা তোহা ২০:১১৪)
তুমি যা জান কেবল তাই লেখ অন্য কিছু নয় ৷ আল্লাহ তাআলা বলেন,"যে বিষয়ে তোমার জ্ঞান নেই তার পিছনে পড়ো না ৷ নিশ্চয়ই কান,চক্ষু ও অন্তর এদের প্রত্যেকেই জিজ্ঞাসিত হবে ৷"( সূরা বনী ইসরাঈল ১৭: ৩৬)
সুতরাং তুমি অন্য কারও থেকে কপি করবে না ৷
পাশাপাশি তুমি অন্যকেও এই ব্যাপারে সহযোগিতা করবে না ৷ আল্লাহ তাআলা বলেন,"পাপ ও সীমালঙ্ঘনের কাজে পরস্পরকে সহযোগিতা করবে না ৷"( সূরা মায়িদাহ ৫:২)
তা তোমার থেকে কপি করার মাধ্যমে হোক অথবা ফাস করা প্রশ্ন দিয়ে সহযোগিতা করার মাধ্যমেই হোক ৷ আর যারা তা ফাস করে তাদের কথা তো বলারই অপেক্ষা রাখে না৷
কি ভাবছ ! বন্ধু হয়ে কি করে সাহায্য না করে পারি?
তাহলে বলব, তুমি এমন বন্ধু হও যে তাঁর বন্ধুর সবচেয়ে বড় কল্যানকামী আর তা হলো তুমি চাইবে তোমার বন্ধু যেন জাহান্নাম থেকে রক্ষা পায় ৷
আবু মূসা আশআরী ( ﺭﺿﻲ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻨﻬﻤﺎ ) থেকে বর্ণিত,অবশ্যই নবী ( ﺻﻠﻲ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪ ﻭﺳﻠﻢ ) বলেছেন,"নিশ্চয়ই সৎ সঙ্গী ও অসৎ সঙ্গীর উদাহরণ হলো কস্তুরী বহনকারী (আতর বিক্রেতা) ও হাপরে ফুৎকার দানকারীর (অর্থাৎ কামারের) মত ৷ কস্তুরী বহনকারী হয় তোমাকে কিছু দেবে না হয় তুমি কিছু ক্রয় করবে অথবা তাঁর কাছ থেকে সুবাস লাভ করবে ৷ আর হাপরে ফুৎকার দানকারী হয় তোমার জামা পুড়ে দেবে বা তুমি তার থেকে দুর্গন্ধ পাবে৷"(বুখারী ; রিয়াদুস সালেহীন,পরিচ্ছেদ ৪৫,হাদীস ৩৬৭)
তুমি তোমার আত্নমর্যাদাবোধ বজায় রাখ ৷ পরীক্ষার সরণ্জ্ঞাম যথাযথভাবে নিয়ে যাও আর যথাসম্ভব এগুলো চাওয়া থেকে দূরে থাক ৷
সাওবান ( ﺭﺿﻲ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻨﻬﻤﺎ ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন , রাসূলুল্লাহ ( ﺻﻠﻲ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪ ﻭﺳﻠﻢ ) বলেছেন, "যে মানুষের কাছে কোন কিছু না চাওয়ার ব্যাপারে আমার কাছে জামিন হবে আমি তার জান্নাতের ব্যাপারে জামিন হব ৷" তখন সাওবান ( ﺭﺿﻲ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻨﻬﻤﺎ ),"আমি জামিন হলাম ৷" তাই কারো কাছে তিনি কিছু চাইতেন না ৷৷ (সুনান আবু দাউদ, যাকাত পর্ব, অধ্যায় ৩,অনুচ্ছেদ ২৮ ,হাদীস ১৬৪৩;
রিয়াদুস সালেহীন, পরিচ্ছেদ ৫৭,হাদীস ৫৪০
হাদীসের মান:সহীহ, তাহক্বীক:আলবানী)
সবশেষে আল্লাহর নিম্নোক্ত বাণীটি উল্লেখ করব
"হে ইমানদারগণ ! আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের আনুগত্য কর এবং শোনার পর তা থেকে বিচ্যুত হয়ো না ৷ আর তাদের মতো হয়ো না যারা বলে, 'আমরা শুনেছি' অথচ তাঁরা কিছুই শোনেনি ৷ নিশ্চয়ই আল্লাহ তাআলার কাছে সমস্ত প্রাণীকুলের তুলনায় তারাই সবচেয়ে বধির ও নির্বাক যারা উপলব্ধি করে না ৷"( সূরা আনফাল ৮:২১-২৩)

যখন তুমি পরীক্ষার্থী / মেরাজুল ইসলাম প্রিয়

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন