শুক্রবার, ৩ আগস্ট, ২০১৮

জীবন চলার পথে


জীবন চলার পথে প্রভুর
নামটি স্মরণ রেখ,
মিথ্যে মোহ মায়ায় তারে
ভূলে যেও নাকো ৷৷়়়়়়়়়়়়়়

সকল প্রশংসা সমস্ত সৃষ্টিজগতের একমাত্র রব আল্লাহ তাআলার জন্য যিনি সর্বোচ্চ, যিনি সবচাইতে মহান, যিনি বিচার দিনের একমাত্র মালিক, যিনি অতুলনীয় ৷ আর অসংখ্য দরুদ ও সালাম মহান আল্লাহ প্রেরিত মানবতার মহান মুক্তিদূত বিশ্বনবী মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ ( ﺻﻠﻲ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪ ﻭﺳﻠﻢ ) এর জন্য ৷
অতঃপর হে প্রিয় বন্ধু !
হ্যা ! আমি আপনাকেই বলছি ! আসুন আজ রাতের আকাশে একটু ভাল করে তাকিয়ে দেখি ৷ দেখবেন, সেখানে কতই না সুন্দর ও মনোরম চাঁদের আলো ফুটে উঠেছে ! সারা শহর, রাস্তাঘাট, নদী- নালা সেই আলোতে জ্বলজ্বল করছে !
এ যেন এক বিস্ময়কর আলো যার দিকে দৃষ্টি পড়তেই আনন্দে মন ভরে ওঠে , যা দৃষ্টিকে প্রশান্তি দান করে, যা হদয়জগতে চিন্তার উদ্রেগ ঘটায় ৷ অথচ দেখুন ! তা দেখতে কখনও ভীরের সম্মুখীন হতে হয় না ! ﺳﺒﺤﺎﻥ ﺍﻟﻠﻪ !
আহ ! কতই না মনোমুগ্ধকর সেই দৃশ্য, কতই না সৌন্দর্যমন্ডিত সেই দৃশ্য , কতই না চিত্তাকর্ষক সেই আলোর মিছিল তাই না!
সেই চাঁদ যত দেখি ততই যেন হারিয়ে যাই, ততই যেন বিস্ময়ে অভিভূত হই আর একথা বলতে বাধ্য হই-
ﺭﺑﻨﺎ ﻣﺎ ﺧﻠﻘﺖ ﻫﺬﺍ ﺑﺎﻃﻼ ﺳﺒﺤٰﻨﻚ ﻓﻘﻨﺎ ﻋﺬﺍﺏ ﺍﻟﻨﺎﺭ
" হে আমাদের রব ! এগুলো তুমি অনর্থক সৃষ্ট করনি ৷ নিশ্চয়ই তুমি মহাপবিত্র ৷ তাই তুমি আমাকে জাহান্নামের আগুন থেকে রক্ষা কর ৷"( সূরা ইমরান ৩:১৯১)
ভাবুন তো একবার সেই মহান সৃষ্টিকর্তা আল্লাহ রাব্বুল আলামীনের কথা ! তিনি কতটা সুন্দর হবেন !
আপনি যখন তা চিন্তা করবেন আপনার মন ব্যার্থ ও পরিশ্রান্ত হয়ে যাবে ৷ আপনার মন বিগলিত হয়ে মহান আল্লাহর প্রতি ঝুঁকে পড়বে ৷ আপনার চোখকে অশ্রশিক্ত করবে ৷ কান্না ভরা কণ্ঠে আপনি কেবল নিম্নোক্ত কথাটিই বলে যাবেন —
ﻭﻟﻮ ﺍﻧﻤﺎ . ﻓﻲ ﺍﻻﺯﺽ ﻣﻦ ﺷﺠﺮﺓ ﺍﻗﻠﻢ ﻭﺍﻟﺒﺤﺮ ﻳﻤﺪﻩ ﻣﻦ ﺑﻌﺪ ﺳﺒﻌﺔ ﺍﺑﺤﺮ ﻣﺎ ﻧﻔﺪﺕ ﻛﻠﻤﺖ ﺍﻟﻠﻪ، ﺍﻥ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﺰﻳﺰ ﺣﻜﻴﻢ ٥
"আর যদি পৃথিবীর সমস্ত গাছকে কলম এবং সমুদ্রকে কালি বানানো হয় অতঃপর তার সাথে যদি আরও সাত সমুদ্র যুক্ত করা হয় তবুও আল্লাহর কালেমা লিপিবদ্ধ করে শেষ করা যাবে না ৷ নিশ্চয়ই তিনি মহাপরাক্রমশালী ও মহাপ্রজ্ঞাময় ৷"( সূরা লুক্বমান ৩১:২৭)
এবার ভাবুন তো ! যে মহান সৃষ্টিকর্তার অতুলনীয় সীমাহীন দয়ায় আমরা এই সুন্দর চাঁদের আলো উপভোগ করছি, মনে আনন্দ পাচ্ছি, চিত্তে প্রশান্তি লাভ করছি, কেমন লাগবে আপনার যখন আপনি প্রত্যক্ষ দৃষ্টিতে কোন রকম ভীরের সম্মুখীন হওয়া ছাড়াই সেই মহাপ্রজ্ঞাময় , মহান রূপদাতা ও সমগ্র সৃষ্টজগতের একমাত্র রব মহান আল্লাহকে দেখতে পাবেন ঠিক যেমন আকাশের চাঁদ স্পষ্ট দেখতে পাচ্ছেন ! তা কি একজন মুমিনের জন্য আনন্দের বিষয় নয় !?
জারীর ইবনে আব্দুল্লাহ ( ﺭﺿﻲ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻨﻪ ) বলেন,
ﻛﻨﺎ ﻋﻨﺪ ﺭﺳﻮﻝ ﺍﻟﻠﻪ ﺻﻠﻲ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪ ﻭﺳﻠﻢ ﻓﻨﻈﺮ ﺍﻟﻲ ﺍﻟﻘﻤﺮ ﻟﻴﻠﺔ . ﺍﻟﺒﺪﺭ ﻭﻗﺎﻝ ﺍﻧﻜﻢ ﺳﺘﺮﻭﻥ ﺭﺑﻜﻢ ﻋﻴﺎﻧﺎ ﻛﻤﺎ ﺗﺮﻭﻥ . ﻫﺬﺍ ﺍﻟﻘﻤﺮ ﻻ ﺗﻀﺎﻣﻮﻥ ﻓﻲ ﺭﺅﻳﺘﻪ -
" একদিন আমরা রাসূলুল্লাহ ( ﺻﻠﻲ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪ ﻭﺳﻠﻢ ) এর সাথে ছিলাম ৷ হঠাৎ তিনি পূর্ণিমার রাতে চাঁদের দিকে তাকিয়ে বললেন, শোন ! নিশ্চয়ই তোমরা অতি শীঘ্রই তোমাদের রবকে স্পষ্টভাবে দেখতে পাবে যেভাবে তোমরা এই চাঁদকে স্পষ্ট দেখছ ৷ তাঁকে দেখতে তোমরা কোন ভীরের সম্মুখীন হবে না ! "(সহীহ বুখারী ও মুসলিম; রিয়াদুস সালেহীন ১৯০৪)
নবী ( ﺻﻠﻲ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪ ﻭﺳﻠﻢ ) আরও বলেছেন,
ﺟﻨﺘﺎﻥ ﻣﻦ ﻓﻀﺔ ﺍﻧﻴﺘﻬﻤﺎ ﻭﻓﻴﻬﻤﺎ ﻭﺟﻨﺘﺎﻥ ﻣﻦ ﺫﻫﺐ ﺍﻧﻴﺘﻬﻤﺎ ﻭﻓﻴﻬﻤﺎ ﻭﻣﺎ ﺑﻴﻦ ﺍﻟﻘﻮﻡ ﻭﺑﻴﻦ ﺍﻥ ﻳﻨﻈﺮﻭﺍ ﺍﻟﻲ ﺭﺑﻬﻢ ﺍﻻ ﺭﺩﺍﺀ ﺍﻟﻜﺒﺮﻳﺎﺀ ﻋﻠﻲ ﻭﺟﻬﻪ ﻓﻲ ﺟﻨﺔ ﻋﺪﻥ —
"দুটি জান্নাত এমন যার পাত্রসমূহ ও অন্যান্য সামগ্রী রূপার তৈরি ৷ আর দুটি জান্নাত এমন যার পাত্রসমূহ ও অন্যান্য সামগ্রী স্বর্ণের তৈরি ৷ আর 'আদন' নামক জান্নাতে জান্নাতীরা আল্লাহর দর্শন লাভ করবে ৷ তখন তাঁদের ও আল্লাহর মাঝে আল্লাহর মহিমাময় চাঁদর ব্যাতিত আর কোন অন্তরায় থাকবেনা ৷"( সহীহ মুসলিম, অধ্যায় ১:ইমান পর্ব, অনুচ্ছেদ ৮০, হাদীস ১৮০)
তিঁনি আরও বলেন,
ﺇﺫﺍ ﺩﺧﻞ ﺍﻟﺠﻨﺔ ﺍﻟﺠﻨﺔ ﻗﺎﻝ ﻳﻘﻮﻝ ﺍﻟﻠﻪ ﺗﺒﺎﺭﻙ ﻭﺗﻌﺎﻟﻲ ﺗﺮﻳﺪﻭﻥ ﺷﻴﺌﺎ ﺍﺯﻳﺪﻛﻢ ﻓﻴﻘﻮﻟﻮﻥ ﺍﻟﻢ ﺗﺒﻴﺾ ﻭﺟﻮﻫﻨﺎ ﺍﻟﻢ ﺗﺪﺧﻠﻨﺎ ﺍﻟﺠﻨﺔ . ﻭﺗﻨﺠﻨﺎ ﻣﻦ ﺍﻟﻨﺎﺭ ﻗﺎﻝ ﻓﻴﻜﺸﻒ ﺍﻟﺤﺠﺎﺏ ﻓﻤﺎ ﺍﻋﻄﻮﺍ ﺷﻴﺌﺎ ﺍﺣﺐ ﺍﻟﻴﻬﻢ ﻣﻦ ﻧﻈﺮ ﺍﻟﻲ ﺭﺑﻬﻢ ﻋﺰ ﻭﺟﻞ—
" যখন জান্নতিরা জান্নাতে প্রবেশ করবে তখন আল্লাহ তাবারাকা তাআ'লা বলবেন, তোমরা কি চাও তোমাদের প্রতি আমার অনুগ্রহ আরও বাড়িয়ে দেই ৷ তারা বলবে, তুমি কি আমাদের চেহারাকে আলোকজ্জ্বল করনি, আমাদেরকে জান্নাতে দাখিল করনি, আমাদের জাহান্নাম থেকে রক্ষা করনি ৷ নবী ( ﺻﻠﻲ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪ ﻭﺳﻠﻢ ) বলেন, অতঃপর মহান আল্লাহ তাআ'লা আবরণ তুলে নেবেন ৷ মহান রব আল্লাহ আযযা ওয়াজল্লার দর্শনের চাইতে অধিক পছন্দীয় আর কিছুই তাদের দেয়া হবে না ৷"( সহীহ মুসলিম, অধ্যায় ১:ইমান পর্ব, অনুচ্ছেদ ৮০, হাদীস ১৮১ )
কি মনটা খুশিতে ভরে গেল তাই না !
কিন্তু ভাবুন তো ! যাকে দেখার আশায় মনটা এত ব্যাকুল, তিনিই যদি মুখ ফিরিয়ে নেন তখন কেমন লাগবে অাপনার ৷
হ্যাঁ বন্ধুরা ! এমনই কিছু লোকের কথাই আল্লাহ ও তাঁর রাসূল ( ﺻﻠﻲ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪ ﻭﺳﻠﻢ ) আমাদেরকে জানিয়েছেন ৷
তাদের কেউ কেউ এমন, যাদেরকে মহান আল্লাহ তাঁর নেয়ামত দান করেছিলেন, অথচ তাঁরা হয়ে গেল সংকীর্ণমনা ও নিচ প্রকৃতির লোক ৷ মহান আল্লাহর নেয়ামত প্রাপ্ত হয়েও সেই জাতি মহান আল্লাহর বাণীকে ভূলে গেল ৷ তারা তাওহীদের শিকড়কে কেঁটে দিল এবং আল্লাহর সাথে শিরক করা শুরু করল ৷ এমনকি তাঁরা মূর্তিপূজা করত, ফেরেশতাদের আহ্বান করত ৷ এমনকি তাঁরা আল্লাহর নবী এবং খাঁটি বান্দাদেরকে আল্লাহর সাথে শরীক স্হাপণ করল ৷ তারা আল্লাহর নবী এবং তাঁর খাঁটি বান্দাদেরকে আল্লাহ ও তাদের মাঝে মাধ্যম হিসাবে স্হাপণ করল ৷ তারা এর মাধ্যমে আল্লাহর নৈকট্য আশা করল ৷ অথচ তাদেরকে এই ব্যাপারে আল্লাহর পক্ষ থেকে কোন নির্দেশ দেওয়া হয়নি ৷
কিয়ামতের দিন আল্লাহ তাঁদেরকে অপদস্হ করবেন ৷ তারা সেদিন শাস্তি প্রতিহত করতে সক্ষম হবে না ৷ তারা আল্লাহকে ছাড়া যাদেরকে ডাকত বা 'আউলিয়া' বানিয়ে নিয়েছিল তারাও তাদেরকে কোন প্রকার সহযোগিতা করতে পারবে না ৷ এই শিরকই ছিল তাদের সবচাইতে বড় জুলুম ৷
[⇨দেখুন: তাফসীর ইবনে কাসীর (সংশোধিত লিপি), অনুবাদ: ড মুজিবুর রহমান,১৫ তম খন্ড, সূরা ফুরক্বানের ১৭-১৯ আয়াতের ব্যাখ্যা দ্রষ্টব্য, পৃষ্ঠা ২৩৮-২৪১]
(⇨এছাড়াও দেখুন: সংক্ষিপ্ত তাফসীর, ড আবূ বকর মুহাম্মদ যাকারিয়া, খন্ড ২, সূরা ফূরক্বানের ১৭-১৯ নং আয়াতের ব্যাখ্যা, পষ্ঠা ১৯০৭, টিকা নং ১ ও ২ এবং পৃষ্ঠা ১৯০৮, টিকা নং ১)
মহান আল্লাহ বলেন,
ﺍﻻ ﻟﻠﻪ ﺍﻟﺪﻳﻦ ﺍﻟﺨﺎﻟﺺ - ﻭﺍﻟﺬﻳﻦ ﺍﺗﺨﺬﻭﺍ ﻣﻦ ﺩﻭﻧﻪ ﺍﻭﻟﻴﺎﺀ ﻣﺎ ﻧﻌﺒﺪﻫﻢ ﺍﻻ ﻟﻴﻘﺮﺑﻮﻧﺎ ﺍﻟﻲ ﺍﻟﻠﻪ ﺯﻟﻔﻲ - ﺍﻥ ﺍﻟﻠﻪ ﻳﺤﻜﻢ ﺑﻴﻨﻬﻢ ﻓﻲ ﻣﺎ ﻫﻢ ﻓﻴﻪ ﻳﺨﺘﻠﻔﻮﻥ - ﺍﻥ ﺍﻟﻠﻪ ﻻ ﻳﻬﺪﻱ ﻣﻦ ﻫﻮ ﻛٰﺬﺏ ﻛﻔﺎﺭ ٥
"নিশ্চয়ই একনিষ্ঠভাবে ইবাদত পাওয়ার অধিকার কেবল আল্লাহর ৷ আর তারা আল্লাহর পরিবর্তে যাদেরকে 'আউলিয়া' সাব্যস্ত করেছে, (এই যুক্তিতে যে,) আমরা তাদের ইবাদত কেবল এজন্যই করি যেন তারা আমাদেরকে আল্লাহর নিকট পৌছে দেয়, যেন আমরা আল্লাহর নৈকট্য অর্জন করতে পারি ৷ নিশ্চয়ই আল্লাহ তাদের মাঝে ফয়সালা করে দেবেন যে বিষয়ে তারা ইখতিলাফ করত ৷ নিশ্চয়ই আল্লাহ এমন কাউকে পথ দেখান না যে মিথ্যাবাদী, কাফের ৷"(সূরা যুমার ৩৯:৩)
তিনি আরও বলেন,
ﻭﻳﻮﻡ ﻳﺤﺸﺮﻫﻢ ﻭﻣﺎ ﻳﻌﺒﺪﻭﻥ ﻣﻦ ﺩﻭﻥ ﺍﻟﻠﻪ ﻓﻴﻘﻮﻝ ﺀﺍﻧﺘﻢ ﺍﺿﻠﻠﺘﻢ ﻋﺒﺎﺩﻱ ﻫٰﺆﻻﺀ ﺍﻡ ﻫﻢ ﺿﻠﻮﺍ ﺍﻟﺴﺒﻴﻞ ٥ ﻗﺎﻟﻮﺍ ﺳﺒﺤﺎﻧﻚ ﻣﺎ ﻛﺎﻥ ﻳﻨﺒﻐﻲ ﻟﻨﺎ ﺍﻥ ﻧﺘﺨﺬ ﻣﻦ ﺩﻭﻧﻚ ﻣﻦ ﺍﻭﻟﻴﺎﺀ ﻭﻟﻜﻦ ﻣﺘﻌﺘﻬﻢ ﻭﺍﺑﺎﺋﻬﻢ ﺣﺘﻲ ﻧﺴﻮﺍ ﺍﻟﺬﻛﺮ ﻭﻛﺎﻧﻮﺍ ﻗﻮﻣﺎ ﺑﻮﺭﺍ ٥ ﻓﻘﺪ ﻛﺬﺑﻮﻛﻢ ﺑﻤﺎ ﺗﻘﻮﻟﻮﻥ ﻓﻤﺎ ﺗﺴﺘﻄﻴﻌﻮﻥ ﺻﺮﻓﺎ ﻭﻻ ﻭﺻﺮﺍ - ﻭﻣﻦ ﻳﻈﻠﻢ ﻣﻨﻜﻢ ﻧﺬﻗﻪ ﻋﺬﺍﺑﺎ ﻛﺒﻴﺮﺍ ٥
"আর যেদিন তিনি তাদেরকে একত্রিত করবেন এবং তারা আল্লাহ ছাড়া যাদের ইবাদত করত তাদেরকে, সেদিন তিনি জিজ্ঞেস করবেন , তোমরাই কি আমার বান্দাদেরকে বিভ্রান্ত করেছিলে না তারা নিজেরাই পথভ্রষ্ট হয়েছিল ৷
তাঁরা বলবে, আপনি মহাপবিত্র ৷ আমরা আপনার পরিবর্তে কাউকে 'আউলিয়া' হিসেবে গ্রহণ করতে পারি না ৷ আর আপনিই তাদেরকে ও তাদের পিতৃপুরুষদের দিয়েছিলেন ভোগসম্ভার ৷ অথচ তারা (মহান আল্লাহর) ওহীর বিধানকে ভূলে গেল এবং এক ধ্বংসপ্রাপ্ত জাতিতে পরিণত হল ৷
আল্লাহ (মুশরিকদের ) বলবেন, তারা তো তোমাদের কথাকে মিথ্যা প্রতিপন্ন করেছে ৷ অতএব তোমরা শাস্তি প্রতিহত করতে সক্ষম হবে না এবং তোমরা কোন সাহায্যও পাবে না ৷ আর যে তোমাদের মধ্যে জুলুম (শিরক) করবে তাকে আমি মহাশাস্তি আস্বাদন করাব ৷"( সূরা ফুরক্বান ২৫:১৭-১৯)
আর কেউ কেউ হল নিম্নোক্ত শ্রেণীর লোক যাদের কথা রাসূল ( ﺻﻠﻲ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪ ﻭﺳﻠﻢ ) সময়ের প্রেক্ষাপটে তিন তিন করে আমাদের জানিয়েছেন ৷ কখনও বা বলেছেন একজনের কথা ৷ তাঁর কিছু বর্ণনা আপনাদের সামনে তুলে ধরছি ৷
আবূ যর ( ﺭﺿﻲ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻨﻪ ) বলেন, নবী ( ﺻﻠﻲ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪ ﻭﺳﻠﻢ ) বলেছেন,
ﺛﻼﺛﺔ ﻻ ﻳﻜﻠﻤﻬﻢ ﺍﻟﻠﻪ ﻳﻮﻡ ﺍﻟﻘﻴﺎﻣﺔ ﻭﻻ ﻳﻨﻈﺮ ﺍﻟﻴﻬﻢ ﻭﻻ ﻳﺰﻛﻴﻬﻢ ﻭﻟﻬﻢ ﻋﺬﺍﺏ ﺍﻟﻴﻢ ﻓﻘﺮﺍﻫﺎ ﺭﺳﻮﻝ ﺍﻟﻠﻪ ﺻﻠﻲ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪ ﻭﺳﻠﻢ ﺛﻼﺙ ﻣﺮﺍﺭ ﻗﺎﻝ ﺍﺑﻮﺍ ﺫﺭ ﺧﺎﺑﻮﺍ ﻭﺧﺴﺮﻭﺍ ﻣﻦ ﻫﻢ ﻳﺎ ﺭﺳﻮﻝ ﺍﻟﻠﻪ ﺻﻠﻲ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪ ﻭﺳﻠﻢ ﻗﺎﻝ ﺍﻟﻤﺴﻴﻞ ﻭﺍﻟﻤﻨﺎﻥ ﻭﺍﻟﻤﻨﻔﻖ ﺳﻠﻌﺘﻪ ﺑﺎﻟﺤﻠﻒ ﺍﻟﻜﺎﺫﺏ —
"কিয়ামতের দিন তিন শ্রেণীর লোকের সাথে আল্লাহ কথা বলবেন না, তাদের দিকে তাঁকাবেনও না, তাদেরকে পবিত্রও করবেন না বরং তাদের জন্য রয়েছে যণ্ত্রনাদায়ক শাস্তি ৷ রাসূলুল্লাহ ( ﺻﻠﻲ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪ ﻭﺳﻠﻢ ) এই কথাটি তিন বার পাঠ করলেন ৷ আবূ যর ( ﺭﺿﻲ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻨﻪ ) বললেন, তারা তো ধ্বংস হয়েছে ও ক্ষতিগ্রস্হ হয়েছে ৷ তারা কে হে আল্লাহর রাসূল ( ﺻﻠﻲ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪ ﻭﺳﻠﻢ ) ! তিনি বললেন: যে টাকনুর নিচে কাঁপড় ঝুলিয়ে পড়ে, যে দান করে খোঁটা দেয়, যে মিথ্যা শপথ করে পণ্যদ্রব্য বিক্রি করে ৷"
(সহীহ মুসলিম, অধ্যায় ১:ইমান পর্ব, অনুচ্ছেদ ৪৬, হাদীস ১০৬, হাদীস ও পর্বসূচীর নম্বরবিন্যাস: ফুয়াদ আব্দুল বাক্বী)
আবূ হুরায়রাহ ( ﺭﺿﻲ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻨﻪ ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ ( ﺻﻠﻲ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪ . ﻭﺳﻠﻢ ) বলেছেন,
ﺛﻼﺛﺔ ﻻ ﻳﻜﻠﻤﻬﻢ ﺍﻟﻠﻪ ﻳﻮﻡ ﺍﻟﻘﻴﺎﻣﺔ ﻭﻻ ﻳﺰﻛﻴﻬﻢ ﻗﺎﻝ ﺍﺑﻮ ﻣﻌﺎﻭﻳﺔ ﻻ ﻳﻨﻈﺮ ﺍﻟﻴﻬﻢ ﻭﻟﻬﻢ ﻋﺬﺍﺏ ﺍﻟﻴﻢ ﺷﻴﺦ ﺯﺍﻥ ﻭﻣﻠﻚ ﻛﺬﺍﺏ ﻭﻋﺎﺋﻞ ﻣﺴﺘﻜﺒﺮ —
" কিয়ামতের দিন তিন ব্যাক্তির সাথে আল্লাহ কথা বলবেন না, তাদেরকে পবিত্রও করবেন না ৷ আবূ মুয়াবিআ [আবূ হুরায়রা ( ﺭﺿﻲ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻨﻪ এর সূত্রে) আরও] বলেন, "তাদের দিকে তাঁকাবেনও না বরং তাদের জন্য রয়েছে যণ্ত্রনাদায়ক শাস্তি ৷ ১৷ ব্যভিচারী বৃদ্ধ ২৷ মিথ্যাবাদী শাসক ৩৷ অহংকারী দরিদ্র ৷" (সহীহ মুসলিম, অধ্যায় ১:ইমান পর্ব, অনুচ্ছেদ ৪৬, হাদীস ১০৭, হাদীস ও পর্বসূচীর নম্বরবিন্যাস: ফুয়াদ আব্দুল বাক্বী)
প্রিয় বণ্ধুগণ ৷ আসুন না আমরা আল্লাহর কাছে তওবা করি যে তওবা আমার অাপনার জীবনটাকেই বদলে দেবে ৷ যে তওবা আপনাকে আমাকে এমন এক জগতের বাসিন্দা হতে সহায়তা করে যেখানে কেবল মহান আল্লাহর আনুগত্য করা হয়, যেখানে তাঁর দেওয়া ওহীর জ্ঞানকে দুনিয়ার সবকিছুর চাইতে দামী গণ্য করা হয় এমনকি জীবনপণ করে হলেও ৷ যেখানের লোকেরা আল্লাহর সাথে কাউকে শরীক করে না ৷ কাউকে মধ্যসত্তভোগী স্হির করে না ৷ যেখানে সণ্ত্রাস, জঙ্গীবাদ, প্রতারণা ইত্যাদি সবকিছুকে নিশ্চিহ্ন ঘোষণা করা হয় ৷
আর যেখানের লোকের অন্যায় করে ফেললে হৃদয়টাকে উজার করে, কান্নাভরা চোখে নিজেকে কেবল তাঁর রবের নিকট অপদস্হ ঘোষণা করে বলে,
ﺍﻟﻠﻬﻢ ﺍﻧﻲ ﻇﻠﻤﺖ ﻧﻔﺴﻲ ﻇﻠﻤﺎ ﻛﺜﻴﺮﺍ ﻭﻻ ﻳﻐﻔﺮ ﺍﻟﺬﻧﻮﺏ ﺍﻻ ﺍﻧﺖ ﻓﺎﻏﻔﺮ ﻟﻲ ﻣﻐﻔﺮﺓ ﻣﻦ ﻋﻨﺪﻙ ﻭﺍﺭﺣﻤﻨﻲ ﺍﻧﻚ ﺍﻧﺖ ﺍﻟﻐﻔﻮﺭ ﺍﻟﺮﺣﻴﻢ —
"হে আল্লাহ ! আমি নিজের প্রতি অনেক জুলুম করেছি ৷ আর তুমি ছাড়া গোনাহ ক্ষমা করার আর কেউ নেই ৷ তাই তোমার নিজস্ব ক্ষমা থেকে আমাকে ক্ষমা করে দাও ৷ আর আমার প্রতি রহম কর ৷ নিশ্চয়ই তুমি অত্যন্ত ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু ৷" " (সহীহ বুখারী, অধ্যায় ১০: আযান পর্ব, অনুচ্ছেদ ১৪৯, হাদীস ৮৩৪, হাদীস ও পর্বসূচীর নম্বরবিন্যাস: মুহাম্মদ বিন হাজ্জাজ)
ﺍﻟﻠﻬﻢ ﺑﺎﻋﺪ ﺑﻴﻨﻲ ﻭﺑﻴﻦ ﺧﻄﺎﻳﺎﻱ ﻛﻤﺎ ﺑﺎﻋﺪﺕ ﺑﺒﻦ ﺍﻟﻤﺸﺮﻕ ﻭﺍﻟﻤﻐﺮﺏ ﺍﻟﻠﻬﻢ ﻧﻘﻨﻲ ﻣﻦ ﺍﻟﺨﻄﺎﻳﺎ ﻛﻤﺎ ﻳﻨﻘﻲ ﺍﻟﺜﻮﺏ ﺍﻻﺑﻴﺾ ﻣﻦ ﺍﻟﺪﻧﺲ ﺍﻟﻠﻬﻢ ﺍﻏﺴﻞ ﺧﻄﺎﻳﺎﻱ ﺑﺎﻟﻤﺎﺀ ﻭﺍﻟﺜﻠﺞ ﻭﺍﻟﺒﺮﺩ —
"হে আল্লাহ ! আমার ও আমার গোনাহসমূহের মধ্যে এমন দুরত্ব দৃষ্টি করে দাও যেমন দুরত্ব রয়েছে পূর্ব ও পশ্চিমের মাঝে ৷ হে আল্লাহ ! আমাকে গোনাহ থেকে এমনভাবে পবিত্র করে দাও যেমন সাদা কাপড় ময়লা থেকে পরিস্কার হয় ৷ হে আল্লাহ ! আমার গোনাহকে পানি, বরফ ও শিশির দ্বারা ধৌত করে দাও ৷" (সহীহ বুখারী, অধ্যায় ১০: আযান পর্ব, অনুচ্ছেদ ৮৯, হাদীস ৭৪৪, হাদীস ও পর্বসূচীর নম্বরবিন্যাস: মুহাম্মদ বিন হাজ্জাজ)

জীবন চলার পথে / মেরাজুল ইসলাম প্রিয়

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন